পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পদ জব্দে আদালতের আদেশের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অপরাধ করে কেউ পার পাবেন না। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীন। বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচারে যদি কেউ অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হন, তাঁরা তাঁকে কেন রক্ষা করতে যাবেন? ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী হোন, অপরাধ করলে শাস্তি তাঁকে পেতে হবে।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ (ক্রোক) করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করারও আদেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের এই আদেশ আসে। বেনজীর আহমেদের সম্পদ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আদালতে এই আবেদন করেছিল দুদক।
বেনজীর আহমেদের প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিষয়টি দেখতে হবে, ব্যক্তি যত প্রভাবশালী হোক, অপরাধ করতে পারে, অপকর্ম করতে পারে। কথা হচ্ছে, এ ব্যাপারে তাঁদের অপকর্ম-অপরাধের শাস্তির ব্যাপারে সরকার সৎসাহস দেখিয়েছে কি না?
অপরাধীদের শাস্তি দিতে শেখ হাসিনা সরকারের সৎসাহস আছে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন, দুদক স্বাধীন। সেখানে যদি অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয় কেউ, আমরা তাকে প্রোটেকশন দিতে যাব কেন? তিনি সাবেক আইজিপি হোন আর সাবেক সেনাপ্রধান হোন। আমাদের দেশের প্রচলিত আইন তাদের শাস্তির কাছে সমর্পণ করবে। এ কারণে কোনো প্রকার সরকারের কাউকে প্রোটেকশন দেওয়ার বিষয় নেই।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে যাঁদের দণ্ড হয়েছে, তাঁরা অধিকাংশ নয়, সবাই ছাত্রলীগের। কিন্তু সরকার তাঁদের প্রোটেকশন দিতে যায়নি। এমনকি বিশ্বজিৎ দাসের হত্যাকারীদের ফাঁসি হয়েছে। সেখানেও সরকার কোনো প্রোটেকশন দেয়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ব্যক্তি অপরাধ-অপকর্ম করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে সরকার তাকে প্রোটেকশন দিচ্ছে কি না। শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। অপরাধী যত প্রভাবশালী হোক, শাস্তি তাকে পেতে হবে।
বিএনপির মহাসচিবের সমালোচনা করে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো প্রতিদিন অনেক কথা বলেন। তাঁর ‘মানুষিক ট্রমা’ মনে হয় ভয়ংকর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তিনি ও বিএনপির নেতারা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন। তাঁরা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। তাঁরা নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে ব্যর্থ। সরকার ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থ। এখন তাঁদের এদিকও নাই, ওদিকও নাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা অর্জন করেছে, দখল করেনি।
বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, বন্ধুরাও আগের মতো এসে তাদের উৎসাহিত করে না। আগে তো সকালে ঘুম থেকে উঠে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে হাজির হতেন নাশতা করার জন্য। সেখানেই নাশতা করতেন। রাতেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কোথায়? মার্কিন দূতাবাসে। সেখানে বিদেশি বন্ধুরা তাদের ক্ষমতায় বসাবে। সেই স্বপ্নের খড়কুটো উবে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মানু মজুমদারের মরদেহ দলীয় কার্যালয়ের সামনে আনা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রয়াত এই নেতার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, মানু মজুমদার প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন। তাঁর বড় পরিচয় হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে যাঁরা প্রতিরোধযোদ্ধা ছিলেন, সেই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। তিনি একাধারে ১৩ বছর কারাগারে ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু বয়স বিবেচনায় তাঁকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।