আওয়ামী লীগের তৈরি, বিচারপতি খায়রুল হকের তৈরি করা সংবিধানের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আজ ঢাকার আবদুল্লাহপুরে পদযাত্রা শুরুর আগে সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ শোভাযাত্রায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন হবে বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন। আজ পদযাত্রার আগে সমাবেশ থেকে সেই বক্তব্যের জবাব দেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি দেখলাম, কাদের সাহেব (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, সংবিধানের বাইরে আপনারা একচুলও সরবেন না। খুব ভালো কথা। আপনার কথায় আপনি স্থির থাকেন। আমরাও বলি, সংবিধানের বাইরে আমরাও এক পা-ও যাব না। সবার লক্ষ্য সংবিধান। খায়রুল হকের (এ বি এম খায়রুল হক) সংবিধান না, বাংলাদেশের সংবিধান।’
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘আমরা চাই অখণ্ড সংবিধান। যে সংবিধান থেকে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে, ওই সংবিধান আমরা চাই না। বাংলাদেশের জনগণ যে সংবিধান তৈরি করেছিল, সেই সংবিধানের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব। আপনাদের তৈরি, খায়রুল হকের তৈরি করা ওই সংবিধানের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না।’
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাহপুরের পলওয়েল মার্কেটের সামনে এক পদযাত্রার আগে সমাবেশ করে বিএনপি।
ঢাকার মিরপুর, লক্ষ্মীপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় গতকালের পদযাত্রায় সরকারি দলের হামলার সমালোচনা করেন সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘আপনারা শান্তি মিছিলের নামে অশান্তি তৈরি করছেন। গতকাল লক্ষ্মীপুরে আমাদের লোক মেরেছেন। আমাদের মিটিংয়ে আমাদের মিছিলে কোনো রকম গোলযোগ হয় না। আপনারা গোলযোগ তৈরি করতে চান কেন?’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আমরা মিছিল-মিটিং করব, আর আপনারা বাঙলা কলেজ (গতকালের পদযাত্রায়) থেকে ইট মারবেন, পাথর মারবেন, আর আমরা ছেড়ে দেবে…এটা তো হবে না। ছেড়ে দেওয়ার দিন শেষ, এখন খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না।’ তিনি হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, ‘গতকাল সারা দেশে আপনারা (ক্ষমতাসীনেরা) যে অত্যাচার করেছেন, আমাদের ওপরে সেই অত্যাচারের সমুচিত জবাব আমরা দেব ইনশা আল্লাহ।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ভোটের অধিকার আদায় করে নেবে। গত ১৫ বছর আপনাদের অত্যাচার আমরা সয়েছি, এই অত্যাচার আর আমরা সইব না। আমরা দেশের জনগণ, বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেল খাটতে শিখেছে, মৃত্যুবরণ করতে শিখেছে, মিছিল করতে শিখেছে…আপনাদের অত্যাচার আর সহ্য করতে পারব না। আমরা অত্যাচারের জবাব দেব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আজকে উত্তরা জেগে উঠেছে। কেন জেগে উঠেছে, এ প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এক দফা এক দাবি, এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বলতে চাই, আওয়ামী স্বৈরাচারকে দূর করুন, এই নতুন প্রজন্ম আপনারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। আমরা আপনাদের স্বাগত জানাব।’
মঈন খান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, ১৫ বছর ধরে কীভাবে এই স্বৈরাচার জনগণের অধিকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, গণতন্ত্রের লেবাস পরে তারা যেটা করে, সেটা হচ্ছে বাকশাল। আজকে তারা অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে। এই বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য এই দেশ স্বাধীন হয়নি।’
বিএনপির এই সমাবেশের পর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু হয়। সেটি বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড, নতুন বাজার, বাড্ডা, রামপুরা ব্রিজ, মালিবাগ, বাসাবো, মুগদা, সায়েদাবাদ হয়ে যাত্রাবাড়ী পৌঁছানোর কথা বিকেল চারটায়। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী এই পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে এই পদযাত্রা রামপুরা ব্রিজে গিয়ে শেষ করবে। এরপর দক্ষিণ বিএনপি তাদের পদযাত্রা যাত্রাবাড়ী গিয়ে শেষ করবে।
উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবেদিন ফারুক, গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
১২ জুলাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলনের যে ঘোষণা দেন, তার প্রথম কর্মসূচি হিসেবে মঙ্গলবার সারা দেশে মহানগর ও জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হয়। রাজধানীতে প্রথম দিন গাবতলী থেকে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত সেই পদযাত্রা হয়। আজ ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে।
ঢাকার বাইরে আজ দিনাজপুর, খুলনা ও চট্টগ্রামে পদযাত্রা হচ্ছে। দিনাজপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খুলনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও চট্টগ্রাম মহানগরে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।