বিএনপির মানববন্ধনেও পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগের

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

ইউনিয়ন থেকে থানা, জেলা ও মহানগর হয়ে রাজধানীতে কয়েক ধাপে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচির পর এবার রাস্তায় মানববন্ধনে দাঁড়াবে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে দলটি আজ শনিবার সারা দেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগরে এই মানববন্ধন করবে। রাজধানীর দক্ষিণে যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু করে উত্তরে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

এদিকে যথারীতি আজকেও ঢাকায় এবং জেলা পর্যায়ে বিএনপির পাল্টা ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ। ঢাকায় দুটি সমাবেশ করবে মহানগর আওয়ামী লীগ। আর ঢাকার বাইরে যুবলীগ সারা দেশেই জেলা পর্যায়ে আজ শনিবার শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এখন নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই দলের মূল বিরোধ। বিএনপি চাইছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। দল দুটি যার যার অবস্থানে অটল থেকেই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এমন পটভূমিতে রাজপথে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। 

এক ঘণ্টার মানববন্ধন

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, পদযাত্রার মতো মানববন্ধনের কর্মসূচিকেও দলের নীতিনির্ধারকেরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এ কর্মসূচিতে সব পর্যায়ের নেতারা অংশ নেবেন। ঢাকায় যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত যে মানববন্ধন হবে, তাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা রাস্তায় দাঁড়াবেন।

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে আসছে। আজ মানববন্ধন কর্মসূচিও একযোগে পালন করবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোট। সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার মানববন্ধন হবে। এই কর্মসূচি থেকে ১৮ মার্চ নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।

বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-কৃষি উপকরণ-শিক্ষা উপকরণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। 

ঢাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে

রাজধানীতে যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত মানববন্ধন হবে দুই ভাগে। আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর-যমুনা ফিউচার পার্ক-বাড্ডা-রামপুরা হয়ে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত মানববন্ধন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। একই সময়ে মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাক-শান্তিনগর-কাকরাইল-নয়াপল্টন-ফকিরাপুল-আরামবাগ-মতিঝিলের শাপলা চত্বর-ইত্তেফাক-টিকাটুলি হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানববন্ধন করবে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত এই কর্মসূচি সফল করতে নানা সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এখন থেকে প্রতিটি কর্মসূচিই রাস্তায় শক্তভাবে করতে চায় বিএনপি। এ কারণে যেসব জায়গায় পদযাত্রা কর্মসূচি ভালোভাবে পালিত হয়নি, সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কোনো নেতা তাঁর দায়িত্বে অবহেলা করলে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ জন্য সব কর্মসূচি পর্যবেক্ষণে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা, মহানগর এমনকি থানা পর্যায়েও কোনো কমিটি কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হলে বা গাফিলতি করলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে।

ইতিমধ্যে কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় এবং দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। পল্লবী থানা বিএনপির আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেনকে (স্থানীয় কাউন্সিলর) নিষ্ক্রিয়তা এবং ওই থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীদের সবাইকে সক্রিয়ভাবে মানববন্ধনে অংশ নিতে বলা হয়েছে।

বিএনপি জানিয়েছে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নয়াপল্টনে, জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন উত্তর বাড্ডা সুবাস্তু নজর ভ্যালির সামনে মানববন্ধনে অংশ নেবেন। এ ছাড়া ঢাকা জেলার কর্মসূচিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জে আবদুল মঈন খান, কক্সবাজারে নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম মহানগরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে সেলিমা রহমান অংশ নেবেন। এর বাইরে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাদের মধ্যে ঢকার উত্তরে ২৬টি পয়েন্টে ২৬ জন এবং দক্ষিণে ২৪টি পয়েন্টে ২৪ জন নেতাকে বিভিন্ন স্থানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এই কর্মসূচি উপলক্ষে কেন্দ্র থেকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দলে নির্বাহী কমিটির সব নেতা নিজ নিজ জেলার কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করবেন এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরা কর্মসূচি সফল করতে সমন্বয় করবেন। এ ছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ছাড়া নির্বাহী কমিটির সব নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ জেলা ও মহানগরে অংশগ্রহণ করবেন।

এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ বেলা ১১টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের বিপরীতে ফার্স হোটেলের সামনে, একই এলাকায় ১২–দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে, গণফোরাম মতিঝিলে নটর ডেম কলেজের উল্টো দিকে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, এলডিপি বেলা তিনটায় কারওয়ান বাজার দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মানববন্ধন করবে। 

‘মানববন্ধন রাস্তায় নয়, হবে ফুটপাতে’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ১০ দফা দাবিতে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করব। রাস্তায় দাঁড়াব না। আশা করি, পুলিশ প্রশাসন আমাদের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে।’

গাজীপুর মহানগরীর মানববন্ধনে প্রধান অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশেই আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো। নেতা-কর্মীরাও সরব। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের পতন না হয় এবং নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’ 

‘ক্ষমতাসীন দলের শান্তি সমাবেশ’

বিএনপির পাল্টা হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করবে বনানী পোস্ট অফিসের কাছে সুপারমার্কেটের পেছনের গলিতে। বেলা তিনটায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। বেলা ১১টায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দুটি সমাবেশেই কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা করবেন।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ঢাকায় দুটি শান্তি সমাবেশ করবে। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সমাবেশটি বেলা তিনটায়, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সমাবেশটি একই সময়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার শেখ রাসেল পার্কের সামনে।

এ ছাড়া যুবলীগ সারা দেশে জেলা পর্যায়ে আজ শনিবার শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে ময়মনিসংহ জেলা ও মহানগর, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জ জেলা এর বাইরে থাকবে। কারণ হিসেবে যুবলীগের নেতারা জানিয়েছেন, আজ ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ আছে। এ জন্য এই বিভাগের জেলাগুলোতে শান্তি সমাবেশ হবে না।

পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁদের কর্মসূচিকে পাল্টা কর্মসূচি বলতে রাজি নন। তাঁরা বলে আসছেন, বিরোধী দলের কর্মসূচি থেকে সহিংসতা হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে তাঁরা শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছেন। আগামী নির্বাচন পর্যন্তই সমাবেশ–মিছিলসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কথা বলছে আওয়ামী লীগ।

 অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপি তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা বলছে।