গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই: ওবায়দুল কাদের

বিএনপিকে গণতন্ত্রের হত্যাকারী বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের হত্যাকারীরা আজ যখন গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে, তখন বুঝতে হবে তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য তাদের মায়াকান্না ছাড়া আর কিছু নয়।

আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই। গণতন্ত্রের জন্য তাদের এই আহাজারি মূলত একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড, হাওয়া ভবন-খোয়াব ভবনের অধিপতি, দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়নের বরপুত্র তারেক রহমানের দুঃশাসনের যুগে দেশকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। এ দেশের গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ এই অন্ধকারের অপশক্তির বিরুদ্ধে আজ ঐক্যবদ্ধ।

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে বাংলাদেশ স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবসভ্যতার ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা হয়েছিল। পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগেরে এই নেতা আরও বলেন, একইভাবে হন্তারকেরা ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল। সেদিন ঘাতক চক্র অসহায় নারী, শিশুকে নির্বিচার হত্যা করেছিল। সেদিন কোথায় ছিল গণতন্ত্র? কোথায় ছিল মানবাধিকার? ১৯৭৫-এর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের পর খুনি জিয়ার হাতে জন্ম নেওয়া বিএনপি যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে, ইতিহাস তখন বিদ্রূপের হাসি হাসে।  

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে অসাংবিধানিক পন্থায় বন্দুকের নলের মুখে জাতিকে জিম্মি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এই বিষয়ে তিনি বলেন, বিচারপতি সায়েমকে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে সরিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদ দখল করেছিলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৯৭৭ সালে হ্যাঁ-না ভোটের প্রহসনের নির্বাচনের নামে দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিলেন স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। জিয়ার তথাকথিত গণতন্ত্র ছিল কারফিউ মার্কা গণতন্ত্র! লাগাতার সামরিক শাসন বলবৎ রেখে জনগণের ওপর দুঃশাসনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন একই সঙ্গে সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজন করে গণতন্ত্রকামী জনগণের সঙ্গে নির্মম তামাশা করেছিলেন স্বৈরাচার জিয়া।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অবৈধভাবে সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছিলেন। স্বৈরাচার জিয়া পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে নির্বাসিত করেছিলেন। স্বৈরাচার জিয়ার হাতে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি এ দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ধারণ করে চলেছে।

জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন করেছিলেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতিকে মিরপুর ও মাগুরা মার্কা উপনির্বাচন উপহার দিয়েছিল বিএনপি! নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারায় আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন এবং ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার সৃষ্টি করেছিল বিএনপি। অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে তখন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়াবহ নজির স্থাপন করা হয়েছিল।

বিএনপি এ দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শ বাস্তবায়নে প্রধান প্রতিবন্ধক বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের উচিত ছিল তাঁদের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের জন্য জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা। অথচ তাঁরা সেটা না করে বরাবরের ন্যায় দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।