সমাবেশে মির্জা ফখরুল

সরকার কথা না শুনলে ফয়সালা রাজপথে

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত সমাবেশ। গতকাল বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গতকাল রাজধানী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের দুই প্রবেশমুখে সমাবেশ করেছে বিএনপি। পৃথক দুটি সমাবেশে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার হটানোর চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। যদি কথা শোনেন ভালো। আর সরকার যদি কথা না শোনে, তাহলে ফয়সালা হবে রাজপথে।’

চূড়ান্ত আন্দোলনের এই ধাপে এসে বিএনপি ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ঘিরে আটটি সমাবেশ এবং পাঁচটি অঞ্চলে রোডমার্চ কর্মসূচি দিয়েছে। গত মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জ ও টঙ্গীতে সমাবেশ এবং বৃহস্পতিবার ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত রোডমার্চ হয়। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর দুই প্রান্ত উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় পৃথক সমাবেশ করে বিএনপি। উত্তরার সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এবং যাত্রাবাড়ীর সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রধান অতিথি ছিলেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এই ধাপের কর্মসূচি শেষে সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি ও এর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও জোট।

গতকাল উত্তরার সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হারাবার কিছু নাই। আমরা পথে নেমেছি। অনেকে বলেন রাস্তায় নামেন। আমরা তো রাস্তায় নেমেই আছি। আমরা পদযাত্রা করছি, রোডমার্চ করছি, সমাবেশ করছি। আমরা জনগণকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে উত্তরার ৮ নম্বর সেক্টরের পলওয়েল মার্কেটের পাশের সড়কে এই সমাবেশ হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক ভাই আমাদের জিজ্ঞেস করেন, ভাই এই আন্দোলনে যদি শেখ হাসিনা না সরেন তাহলে কী করবেন।’ মির্জা ফখরুল নিজেই এর জবাব দিয়ে বলেন, ‘সেটা তো শেখ হাসিনার দায়িত্ব। উনি ডিসাইড করবেন। আমাদের পরিষ্কার কথা, এই দেশে অবশ্যই শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। মানুষকে তার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো বেশি কিছু চাই না। আমরা চাই আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। যদি কথা শোনেন ভালো, না হয় ফয়সালা হবে রাজপথে।’

এবার মানুষ পাতানো নির্বাচন হতে দেবে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ওরা ক্ষমতায় থাকবে, আর আমরা বরাবরের মতোই বোকা বনে গিয়ে নির্বাচন করব, আর সে আবার নিজেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করবে। এবার কি সেটা হতে দেবে মানুষ?’ এ সময় সবাই সমস্বরে ‘না’ বলে জবাব দেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না। এই ঘোষণার পর এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সচিব গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেট ঘাটতির কারণে তারা আসবে না। এ বক্তব্যকে মির্জা ফখরুল ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এদের লজ্জাও নেই। ওই যে একটা নির্বাচন কমিশন করছে না। কমিশনের সচিব কালকে মিডিয়াকে বলেছে, বাজেট ঘাটতির জন্য নাকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দল আসবে না। ডাহা মিথ্যা বলতে তাদের এতটুকু বাধে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে কোনো মানুষ নাই। ওই কারণেই তারা আজকে এত বেপরোয়া হয়ে গেছে।’

‘কাটাকুটির সংবিধানে নির্বাচন নয়’

যাত্রাবাড়ীর সমাবেশে ‘কাটাকুটির সংবিধান’ দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে মন্তব্য করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ওনারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিধান নাই। আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই এই সরকারকে, আপনারা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসলেন, কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছিলেন।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গভবন গিয়ে ক্ষমতা ছাড়লেন, তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো। এবং সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আপনারা নির্বাচনে গেছেন। এখন কেন বলেন নানা রকম কথা। আরে সংবিধান তো কেটেকুটে নষ্ট করে দিয়েছেন আপনারা। সেই কাটাকুটির সংবিধান দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে ডিসি-এসপি কারও চাকরি থাকবে না। আমরা এসব বলি না, ওরা বলে। এসব কথা বলে তারা ডিসি ও এসপিদের ভয় দেখায়। বিএনপি কারও চাকরি খাওয়ার জন্য, কাউকে হত্যার জন্য রাজনীতি করে না। সব ডিসি-এডিসি তো খারাপ নয়, শুধুমাত্র খারাপগুলোকেই ধরা হবে আইন অনুযায়ী।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, জুলুম, নির্যাতন, হামলা, মামলা করে আন্দোলন দমানো যাবে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এই সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, খায়রুল কবির, নাসির উদ্দিন অসীম প্রমুখ।

উত্তরার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ। হাজার হাজার নেতা-কর্মী সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে দুটি সমাবেশে অংশ নেন।