বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি ন্যূনতম অনুসরণ করছেন না। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে পুরোপুরি নির্বিকার বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
আজ শনিবার বিকেলে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, ভোটের ২১ দিন আগে প্রচার-প্রচারণা চালানো যায়। তাঁর প্রশ্ন, তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তৈরি ডকুড্রামা ‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল’ কি প্রচারণা নয়?
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আচরণবিধিমালা ১৪ (২) ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র ‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল’ ডকুমেন্টারি ফিল্মটি চারটি সিনেমা হলে গতকাল শুক্রবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, মধুমিতা ছাড়াও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে শেখ হাসিনাকে নিয়ে তৈরি ছবিটি। প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে একজন প্রার্থী। শেখ হাসিনা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেই কারণে ইতিহাসের নানা ঘটনা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার পালাবদল, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এককেন্দ্রিক উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আচরণবিধির চরম লঙ্ঘন।
আচরণবিধিতে বলা আছে, এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে না। এতে প্রচারণা শুরুর আগেই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। নিজে প্রার্থী হয়ে নিজেই কীভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করেন, তা বোধগম্য নয়।
রিজভী বলেন, একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি ন্যূনতম অনুসরণ করছেন না। এ বিষয়ে পুরোপুরি নির্বিকার সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালার ১২ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ভোট গ্রহণের তিন সপ্তাহ আগে কোনো প্রকার প্রচার শুরু করা যাবে না। একই সঙ্গে বিধিমালার ১০ (ঙ) ধারানুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রার্থীর ছবি বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। এই ডকুমেন্টারি ফিল্মটি কি প্রচারণামূলক নয়?
বিধিমালার ৭-এ পোস্টার ব্যবহারের বিধি-নিষেধও আছে। সেখানে বলা আছে, সিটি করপোরেশন এবং পৌর এলাকার কোথাও পোস্টার সাঁটানোর কোনো সুযোগ নেই। অথচ ডকুফিল্মটি সিটি করপোরেশন এলাকায় অর্থাৎ সিনেমা হলগুলোয় প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত পোস্টারসহ রীতিমতো মহড়া আকারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
রিজভী বলেন, ধানমন্ডির সুধা সদনে অবস্থিত সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) পক্ষে ডকুফিল্মটি প্রযোজনা করেছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ঢাকঢোল পিটিয়ে এসব করা হলেও নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এ ছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশন ও রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সিটি করপোরেশনের স্থাপিত টিভি স্ক্রিনে শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আচরণবিধি ভঙ্গের অসংখ্য প্রমাণ থাকলেও নির্বাচন কমিশনের নীরব ভূমিকার কারণে নির্বাচনে ন্যূনতম লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। বরং আচরণবিধি লঙ্ঘন না করলেও পরিকল্পিতভাবে ঘটনা তৈরি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এসব কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অবিলম্বে শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত ডকুফিল্মটি সিনেমা হলগুলো থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। কোনোভাবেই নির্বাচনকালীন এসব প্রচারণা চালানো যাবে না। পাশাপাশি গণভবনকেও নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন কেন এসব বিষয়ে দ্রুত আচরণবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারের প্রতি নতজানু বলেই নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে কমিশন আগ্রহী নয়।