মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা

'সাংসদ আমানুররা চার ভাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত'

সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা)। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা)। প্রথম আলো ফাইল ছবি

হত্যার শিকার আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের মেয়ে ফারজানা আহমেদ ওরফে মিথুন আদালতে বলেছেন, সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা ও তাঁর ভাইয়েরা ছাড়া কারও সঙ্গে তাঁর বাবার শত্রুতা ছিল না। এই চার ভাই তাঁর বাবার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এ হত্যার পরিকল্পনা করেই সাংসদের দুই ভাই তৎকালীন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ভারতে এবং জাহিদুর রহমান খান কাঁকন মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এই মামলায় টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার পর জেরার সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ফারজানা এসব কথা বলেন।

এর আগে আমানুর সকালে এই আদালতেই বিচারাধীন তাঁর বড় ভাই আমিনুর রহমান খান বাপ্পি হত্যা মামলায় সাক্ষী দেন।

ফারজানা সাক্ষী দেওয়ার পর সাংসদ আমানুর রহমান খান রানার পক্ষে ঢাকা থেকে আসা আইনজীবী মাহবুব আহমেদ প্রথমে জেরা করেন। পরে আমানুরের তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এবং অন্য আসামি কবির মিয়া, আলমগীর হোসেন চান, ছানোয়ার হোসেন ও বাবু মিয়ার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আরফান আলী মোল্লা জেরা করেন।

টাঙ্গাইল কোর্ট পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাংসদ আমানুর রহমান খান রানাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে মাইক্রোবাস করে বুধবার সকালে আদালতে আনা হয়। প্রথমে এ আদালতে বিচারাধীন বড় ভাই আমিনুর রহমান খান বাপ্পি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেন আমানুর। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাঁকে জেরা করেন। জেরা শেষ না হওয়ায় এই মামলায় পরবর্তী জেরার তারিখ দেওয়া হয় আগামী ৩০ আগস্ট।

দুপুরের বিরতির পর একই আদালতে বেলা আড়াইটায় ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের পর আমানুরের আইনজীবীরা তাঁর জামিনের আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের বিরোধিতা করেন। পরে আদালত আমানুরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

মামলার প্রধান আসামি আমানুর ছাড়াও টাঙ্গাইল কারাগারে থাকা আরও তিন আসামি মোহাম্মদ আলী, আনিছুর রহমান রাজা ও মো. সমিরকে আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া জামিনে থাকা আসামি নাসির উদ্দিন নুরু, মাসুদুর রহমান মাসুদ ও ফরিদ আহম্মেদ আদালতে হাজিরা দেন।

দুটি মামলার সাক্ষী গ্রহণ শেষে বিকেলে আমানুরকে কড়া পুলিশি প্রহরায় কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর আমানুর ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এই আদালতেই আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১ আছেন। বেশ কয়েক দফা উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

আমানুরের বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রহমান খান বাপ্পি ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। এ মামলায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ছোট দুই ভাই মুরাদ সিদ্দিকী ও আজাদ সিদ্দিকীসহ ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।