চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেছেন, ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হবেন কি হবেন না তা নির্ভর করছে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তবে একজন রাজনৈতিক কর্মীর স্বপ্ন থাকে জনপ্রতিনিধি তথা সাংসদ, মন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার। আর মানুষ যত দিন বাঁচে, তত দিন স্বপ্ন দেখে।
আজ শনিবার দুপুরে বিদায়ী মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে নিজের পারিবারিক মালিকানাধীন হোটেল ওয়েল পার্কে এ সভার আয়োজন করা হয়।
টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর ২৩ এপ্রিল সিডিএ চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম জহিরুল আলম দোভাষ।
ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখেন কি না, জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘আমি যে সিডিএর চেয়ারম্যান হব, এমন কোনো স্বপ্ন আমার ছিল না। সুযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন যে দায়িত্ব পাব, সেই দায়িত্ব পালন করে যাব। কারও পছন্দ বা ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে কোনো পদ পাওয়া যায় না। এটি জনগণের ম্যান্ডেট এবং সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) ইচ্ছা, আমি মেয়র হব কি না, সেটি আমার নেত্রী কি চান সেটার ওপরই নির্ভর করছে। সুযোগ আসলে আলহামদুলিল্লাহ, সুযোগ না আসলেও আলহামদুলিল্লাহ। আমার কোনো বেদনা নেই।’
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আবদুচ ছালাম। কিন্তু দলের মনোনয়ন পেয়ে করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। এরপর দুই সংস্থার মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
এদিকে বর্তমান মেয়রের মেয়াদ আগামী বছরের জুলাই মাসে শেষ হবে। মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মতবিনিময় সভায় আরেক প্রশ্নের জবাবে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মীর স্বপ্ন থাকে এমপি হবেন, মন্ত্রী হবেন, উপজেলা চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর হবেন। আমিও এমপি হতে চেয়েছিলাম, সে জন্য যুদ্ধ করেছি। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী কারণে আমাকে সিডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, আমি জানি না।’
সিডিএ চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ছালাম। কিন্তু আসনটি তখন জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদলকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বাদল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হন।
গত ১০ বছরে দায়িত্ব পালনের সময় চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছেন বলে জানান আবদুচ ছালাম। এগুলো হচ্ছে জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন, বিশ্বমানের পর্যটন শহর এবং চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিন সংস্থার চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে উল্লেখ সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবেন। তবে এই বছরও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।
চট্টগ্রাম নগরের নির্মিত উড়ালসড়কগুলো নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সিডিএ চেয়ারম্যান। তাঁর দাবি, এখন উড়ালসড়কগুলোই সে সমালোচনার জবাব দিচ্ছে।
দায়িত্ব পালনের সময় ৫টি নতুন সড়ক নির্মাণ এবং ১০০ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ করেছেন বলে জানান সিডিএ চেয়ারম্যান। নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ার কাজ চলছে।
দায়িত্ব পালনকালে কোনো ব্যর্থতা আছে কি না, জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, নিজের কাজে কোনো ব্যর্থতা মানুষ নিজে দেখেন না। অন্যরা তা বিচার করবেন।
সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত যে সঠিক তা প্রমাণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিদায়ী চেয়ারম্যান। তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সিডিএর বোর্ড সদস্য ও করপোরেশনের কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন ও হাসান মুরাদ বিপ্লব, স্থপতি আশিক ইমরান, মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন শাহ, কে বি এম শাহজাহান, এম আর আজিম ও রুমানা নাসরীন প্রমুখ।