ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুরের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের রাত থেকে পরদিন পর্যন্ত বিজয়ী স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থকেরা ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সদরপুরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, মারধর করেছেন। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানিয়েও কোনো প্রতিকার তিনি পাননি। তিনি এ সময় আক্ষেপ করে বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়াই কি অপরাধ হয়েছে?
ভাঙ্গা পৌরসভার কার্যালয়ের সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন সাবেক সাংসদ কাজী জাফর উল্যাহ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন রাত থেকে ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা ও সদরপুর অঞ্চলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে প্রতিপক্ষের গুন্ডারা একাত্তরের পরাজিত শক্তির মতো তাণ্ডব চালিয়েছে।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘অনেক দুঃখ, বেদনা নিয়ে আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে দেশবাসী ও প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অত্যন্ত ছোট একটি বার্তা পৌঁছাতে চাই। নেত্রী শেখ হাসিনা নৌকায় ভোট দিতে বলেছিলেন। নৌকায় ভোট দেওয়াই কি আজ অপরাধ হয়েছে? একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় যাচ্ছে। কিন্তু ভাঙ্গা ও সদরপুর এলাকায় মার খেয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে নৌকার সমর্থকেরা।’ এ সময় তিনি প্রশাসনের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনের দিন রাতে ও পরদিন ভাঙ্গায় অন্তত ৮৬টি জায়গায় হামলা হয়েছে। বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে থানায় ৪৮টি অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু পুলিশ মাত্র ৭টি মামলা নিয়েছে।’
কাজী জাফর উল্যাহ আরও বলেন, ৩১ ডিসেম্বর সকালে যখন একের পর এক খবর আসতে থাকল যে নৌকার সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে, ভাঙচুর হচ্ছে, লুটতরাজ হচ্ছে, তখন তিনি ডিসি, এসপি ও ওসিকে আবারও জানান। কিন্তু বিন্দুমাত্র ফল পাননি। অবশেষে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি হামলার বিষয়টি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে জানান।
আক্ষেপ করে সংবাদ সম্মেলনে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের নায়কেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও প্রশাসন ও পুলিশ নাকি তাদের খুঁজে পায় না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘এই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসন ও পুলিশ যদি এ তাণ্ডব থামাতে না পারে, আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদে জোরালো কর্মসূচি দেব।’
কাজী জাফর উল্যাহর অভিযোগের ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসন কোনো ব্যাপারে কোনো গাফিলতি করেনি। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরের দিন তিনি ও পুলিশ সুপার দীর্ঘ সময় ভাঙ্গায় অবস্থান করেছেন। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার জন্য এ পর্যন্ত ১৫ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে।