জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশে এখন মাত্র দুটি দল। একটি আওয়ামী লীগ আর অপরটি জাতীয় পার্টি। দলের সাংগঠনিক রূপ ধরে রাখার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন এরশাদ। রাজধানীর গুলশানের একটি কনভেনশন সেন্টারে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। সকাল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মিছিল নিয়ে হাজির হন সেখানে।
বেলা ১১টায় সাক্ষাৎকার শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ৪৫ মিনিট পর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেখানে হাজির হন পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ অন্য নেতারা। বক্তব্য শেষে বেলা সোয়া একটার দিকে বের হয়ে যান তাঁরা।
বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির নেতারা বলেছেন, পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। সবাই যেন সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলের পক্ষে কাজ করেন।
বক্তৃতায় এরশাদ বলেন, ‘আল্লাহ সুযোগ দিয়েছেন আমাদের। আমাদের তো বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা। এখন দুটি দল মাত্র, আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি। আর কোনো দল নাই। অনেক দুঃসময় পেরিয়ে জাতীয় পার্টি আবার জেগে উঠেছে। পার্টি সাংগঠনিক রূপ নিয়েছে, যা ধরে রাখতে হবে।’
প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলে এরশাদ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তাঁর দুঃখকষ্টের কথা স্মরণ করে তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা গ্রহণ করবেন দলের নেতা-কর্মীরা। তাঁর ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ছেড়ে দিতে বলেন।
এরশাদ বলেন, ‘আমার ওপর ছেড়ে দাও। রাজনৈতিক কারণে অন্য জোটে যেতে হলে এর সিদ্ধান্ত আমি নেব। দেশ, পার্টি ও নেতা-কর্মীদের স্বার্থ বিবেচনা করে ভোট ও জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেব। এর আগে প্রেসিডিয়াম সভায় আমাকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ আরও বলেন, আজ এত লোক তাঁর সঙ্গে। জাতীয় পার্টির দুঃখ ঘুচেছে। জাতীয় পার্টি বিলীন হয়নি, তার প্রমাণ দলের নেতা-কর্মীরা। তিনি বলেন, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাইকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারবেন না। যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁকেই মনোনয়ন দেবেন। এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে।
এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে যায়নি। এ জন্য ৩০০ আসনে প্রার্থী আছে কি না, তা দেখতে চেয়েছিলেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যা দেখে বুঝতে পেরেছেন তাঁরা সফল হয়েছেন।
১১ নভেম্বর থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। চলে পাঁচ দিন। মনোনয়নপ্রত্যাশী ২ হাজার ৮৬৫ জনের ফরম যাচাই-বাছাই করে ৭৮০ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়।
এরশাদ বলেন, ‘এই পার্টির জন্য আমার চেয়ে কেউ এত দুঃখ কষ্ট সহ্য করে নাই। একটা দিনের জন্যও মুক্ত ছিলাম না আমি। এখনো নই। একটা দিনের জন্যও শান্তিতে ছিলাম না। এখনো মামলা চলছে আমার। মামলার নিষ্পত্তি হয় নাই। এই মামলার ভার মাথায় নিয়ে আমি তোমাদের নেতৃত্ব দিয়েছি।’
এদিকে স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্ধারণে যে ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন, তা পার্টির সবাই মেনে নেবেন। দলের চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেকোনো সিদ্ধান্তে পার্টির কেউ এরশাদকে ছেড়ে যাবেন না। কারণ এরশাদকে সবাই বিশ্বাস করেন। বৃহত্তর স্বার্থে মহাজোট কিংবা অন্য কোনো জোটে এরশাদ যাবেন কি না, সেটা একান্ত তাঁর (এরশাদ) সিদ্ধান্ত। মহাসচিবের মতে, এরশাদ নির্ভুল পথে হাঁটছেন।