পাবনার চাটমোহর ডিগ্রি কলেজ ভোটকেন্দ্রের সামনের একটি চায়ের দোকান। বেলা একটার দিকে ষাটোর্ধ্ব দুই প্রবীণ সেখানে বসে কথা বলছিলেন। ভোট কেমন হলো, জানতে চাইলে তাঁদের একজন বললেন, ‘এক দলের ফুটবল খেলা দেখতি যেমবা লোক হয় না, উপজেলার ভোটও হলো সেমবা।’
পাবনা জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে গতকাল সোমবার ৮টিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিকাংশ উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বিদ্রোহীরা। এর মধ্যে ছয়টি উপজেলার বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা মিলেছে শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের। গতকালের এ ভোটে শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী, নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের তৎপরতা থাকায় চায়ের দোকানে বসা প্রবীণ ওই মন্তব্য করেন। তবে ভোট গ্রহণ হয়েছে শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণভাবে। দু–একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর মেলেনি।
গতকাল সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে প্রায় একই চিত্র মিলেছে। অধিকাংশ কেন্দ্রেই ছিল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। দীর্ঘ সময় পরপর দুই–চারজন করে ভোটার আসছিলেন, ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। ফলে ভোটারের কোনো সারি চোখে পড়েনি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আটঘরিয়া উপজেলার দেবত্বর পাইলট বালিকা বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫ জন ভোটার দাঁড়িয়ে আছেন। তবে তাঁদের অধিকাংশই নারী। কর্তব্যরত প্রিসাইডিং অফিসার জানান, ওই কেন্দ্রের ৩ হাজার ৮৬১ ভোটারের মধ্যে তখন পর্যন্ত ৪২১ জন ভোট দিয়েছেন।
বেলা একটার দিকে চাটমোহর উপজেলার ভাদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারের তেমন কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি। দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার সিরাজুল ইসলাম জানান, তখন পর্যন্ত তিনি ২৫ শতাংশ ভোট গ্রহণ করেছেন।
বেলা আড়াইটার দিকে ভাঙ্গুড়া উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরেও একই রকম চিত্র মেলে।
বেলা তিনটার দিকে ফরিদপুর উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে কিছুটা ভিন্নচিত্র পাওয়া যায়। উপজেলাটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন একজন দলীয় ‘বিদ্রোহী’ ও বিএনপির এক সাবেক নেতা। ফলে উপজেলার অধিকাংশ কেন্দ্র ঘিরে ছিল উৎসুক মানুষ। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ে পুরুষ ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার গোলাম মোস্তফা জানান, তাঁর কেন্দ্রে প্রায় ৫৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। একই তথ্য দেন পাশের নারী কেন্দ্রের কর্মকর্তা ইসলাম হোসেন।
বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণের শেষ মুহূর্তে উপজেলার সোনাহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা মেলে উৎসাহী জনতার। তাদের দাবি, দুই দলের প্রার্থী থাকায় উপজেলাটিতে বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, তাঁর কেন্দ্রে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
এদিকে ভোট গ্রহণের এ চিত্রের বাইরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর উপজেলার সাভার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে মৃদু পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও আনন্দপূর্ণ পরিবেশে সম্পূর্ণ হয়েছে। যাঁরা ভোট দেওয়ার, তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন। ভোটার উপস্থিতিও বেশ ভালো ছিল।