দেশের বুদ্ধিজীবীরা ‘চামচাগিরি’ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘এটা খুবই সত্য কথা, বুদ্ধিজীবীরা চামচাগিরি করছেন, মীরজাফরি করছেন। বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের দায়িত্ব পালন না করে উল্টো কাজ করছেন।’
আজ বুধবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এক স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশ: কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির চালচিত্র’ শীর্ষক এই স্মারক বক্তৃতানুষ্ঠান আয়োজন করেছে নাজমুল করিম স্টাডি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বুদ্ধিজীবীদের মানুষকে পথ দেখানোর কথা। কিন্তু তাঁরা চামচাগিরি করেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেন, দায়িত্ব পালন না করে উল্টোটা করেন, এটাই বাংলাদেশে হচ্ছে, চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নতি অনেক করেছি, দৃশ্যমান উন্নতি আছে, অবকাঠামোগত উন্নতি আছে, জিডিপি পরিসংখ্যান আছে, বিদেশি প্রশংসা আছে। কিন্তু ভেতরের দুর্দশা হচ্ছে শিশুর। যে শিশু খেলতে চেয়েছিল, খেলতে গিয়ে ধর্ষিত হলো, খেলতে গিয়ে প্রাণ হারাল। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বাস্তবতা। এই বাস্তবতাই প্রতিফলিত হচ্ছে, এই রাষ্ট্র নৃশংস, এই রাষ্ট্র আমলাতান্ত্রিক।’
এই রাষ্ট্র কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, মন্তব্য করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘তবে শুধু কর্তৃত্ববাদী বললেই হবে না, এই ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী ও চূড়ান্ত। এই রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদী। ক্ষমতা যখন একজনের হাতে চলে যায়, সেটা আমরা পাকিস্তানের আমলে দেখেছি, ৪৬ বছর ধরে বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখছি। এই রাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী চরিত্র আরও বিকশিত হয়েছে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আর সেই জন্যই আজকের দুর্দশা হচ্ছে, আমরা কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না।’
নাজমুল করিম স্টাডি সেন্টার ২০১৪ সালের মে মাস থেকে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে। এই পর্যন্ত ১২টি স্মারক বক্তৃতানুষ্ঠান হয়েছে। এবারের স্মারক বক্তা ছিলেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। বক্তৃতা সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তার পেছনে আছে হত্যাকাণ্ড, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ। এগুলো বাস্তবিক সত্য। অল্প কথায়, বক্তা সেসব তুলে ধরেছেন।
এর আগে স্মারক বক্তৃতায় লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী চরিত্র শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বেই এমনটা হচ্ছে। বাংলাদেশে বাস করে প্রতিনিয়ত আমরা এটার মুখোমুখি হই। কর্তৃত্ববাদ মানে অন্যের ওপরে নিজের মতামত চাপিয়ে দেওয়া। এটা আমরা সর্বত্র প্রতিনিয়ত দেখছি। রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও দেখছি, মতামত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। এমনকি গণমাধ্যমেও এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। গণতান্ত্রিক চর্চার সঙ্গে এই চাপিয়ে দেওয়া কর্তৃত্ববাদ সংগতিপূর্ণ না।’
রাজনীতিতে কর্তৃত্ববাদের অস্তিত্ব প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় সংসদের সদস্য হতে পারলে অনেক অর্থ, বিত্ত ও প্রতিপত্তির মালিক হওয়া যায়। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের মাস্তানতন্ত্র জেঁকে বসেছে। নির্বাচনপ্রত্যাশীরা কেবল প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর ওপরই চড়াও হচ্ছেন না, নিজের দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও তাঁরা কোনো ছাড় দিতে চান না। এ জন্য সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে খুন করতেও তাঁদের হাত কাঁপে না। অন্য দল ও নিজ দলের ভেতরে বিরোধ ও খুনখারাবি এখন ডালভাত। ক্ষমতার যে মধু, তার স্বাদ পেতে সবাই মরিয়া।