প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সদ্য গঠিত মন্ত্রিপরিষদে কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসন থেকে জয়ী কোনো সাংসদের ঠাঁই হয়নি। এতে করে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এবারই প্রথম কিশোরগঞ্জ মন্ত্রীশূন্য জেলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলাবাসীর ধারণা ছিল, এবারও কিশোরগঞ্জে একাধিক মন্ত্রী থাকছেন। শেষ কেউ না থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন জেলার বাসিন্দারা।
রোমান মিয়া ভৈরব পৌর শহরের রানী বাজার এলাকার বাসিন্দা। বয়সে তরুণ এই ব্যক্তি পেশায় ব্যবসায়ী বলেন, ‘একাধিক মন্ত্রী আশা করেছিলাম। এখন দেখি আশার ফল শূন্য। এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে।’
১৩ উপজেলার জেলা কিশোরগঞ্জে সংসদীয় আসন ছয়টি। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব কটি আসন মহাজোটের। রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ এই জেলায় স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে সব সরকারের আমলে এক বা একাধিক ব্যক্তি মন্ত্রী ছিলেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ক্ষেত্রে জেলাটির গৌরব বেশ উজ্জ্বল। বর্ষীয়ান রাজনীতিক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মো. জিল্লুর রহমান ও আবদুল হামিদ এই জেলার বাসিন্দা। তাঁরা আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই জেলা থেকে প্রথম মন্ত্রী হন জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রথম মন্ত্রিসভায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সেই থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে কোনো সরকারের আমলে কিশোরগঞ্জ মন্ত্রীশূন্য ছিল না।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী হয়েছিলেন মনোরঞ্জন ধর। ১৯৭৩-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পাটমন্ত্রী ছিলেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ আসাদুজ্জামান খান। ১৯৭৯ সালে বিএনপির শাসনামলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ আবু আহমদ ফজলুল করিম। ১৯৮৬ সালে এরশাদের শাসনামলে ভূমি উপমন্ত্রী হন মুজিবুল হক। তিনি কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির সাংসদ ছিলেন। ওই সময় আইনমন্ত্রী ছিলেন এই জেলার হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়া। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন এই জেলার মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে কিশোরগঞ্জ আসনের বিএনপির সাংসদ এ বি এম জাহিদুল হক নৌপরিবহন উপমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তখন কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে জয় পাওয়া জিল্লুর রহমানকে করা হয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী। সৈয়দ আশরাফ পান বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসে। ওই সময় কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ ওসমান ফারুককে করা হয় শিক্ষামন্ত্রী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। তখন সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের পাশাপাশি পান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। মহজোটের শরিক হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের মুজিবুল হককে করা হয় যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসলে সৈয়দ আশরাফ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর পদটি ধরে রাখেন। পরে তাঁকে দেওয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ছয়টি আসনে মহাজোটের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর সবাই মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ রাজনীতিতে আসার পর থেকে দল ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রিত্ব পাবেন—এমন ধারণা ছিল সবার। নাজমুল হাসান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানের সন্তান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁদের আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে। জেলাবাসীর ধারণা ছিল, তাকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ রেজওয়ান আহম্মদ বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। তাঁর মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের আফজাল হোসেন এবার তৃতীয়বারের মতো সাংসদ হয়েছেন। তিনিও ছিলেন আলোচনায়।
সাংসদ নূর মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি ভাবনার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। সময় শেষ হয়ে যায়নি। দেখা যাক কী হয়। তবে মন্ত্রিত্ব লাভ হোক কিংবা না হোক, এলাকাবাসীর কাছাকাছি থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে এতটুকু পিছপা হবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।