বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্ক হয়ে থাকা ১৫ ও ২১ আগস্টের ভয়াবহতার কথা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের জানাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজ শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ‘বাংলাদেশের ওপর ১৫ আগস্টের প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে এই আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয় উপ-কমিটি আয়োজিত আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা। আলোচনা শেষে কূটনীতিকেরা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি স্মারকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
শেখ মুজিব নয়, বাংলাদেশকে হত্যা
আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে চলতে না দেওয়ায় আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। যদি তাঁর দেখানো পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারত, তাহলে হয়তো এখন আমরা উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতাম।’
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানো বাংলাদেশে কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জানা উচিত বাংলাদেশের জন্য উনি কী পরিকল্পনা করে গেছেন। কৃষিনির্ভর এই দেশের কৃষকদের স্বার্থে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৭২ সালে দেশে ফেরার পর থেকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন কৃষি ও শিক্ষা খাতে। বাংলাদেশে যুদ্ধ–পরবর্তী সময় কৃষিজমির খাজনা হ্রাস এবং ১৬ হাজারের বেশি যুদ্ধবিধ্বস্ত স্কুল পুনর্নির্মাণ ও সরকারের অধিভুক্ত করেন তিনি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের জন্য বিস্ময়। কেননা যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার পর তার সংবিধান তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় ১১ বছর। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সংবিধান তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় ৩ বছর। পাকিস্তানেরও প্রথম সংবিধান তৈরি করতে সময় লেগেছিল ৯ বছর। সেখানে মাত্র ৯ মাসে আমরা আমাদের সংবিধান তৈরি করতে পেরেছি শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণে।’
আজকের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে শুধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়নি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকেও হত্যা করে আরেকটি পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকেরা। তারা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের একে এক হত্যা করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলে আরেকটি পাকিস্তান রাষ্ট্র তৈরি। কিন্তু তারা সফল হয়নি। যেই বাংলাদেশকে তারা হতে দিতে চায়নি বলে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিল, সেই বাংলাদেশ আজ গড়ে উঠছে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। ২০১৭ সালে মাথাপিছু আয়ে আমরা ছাড়িয়ে গেছি পাকিস্তানকে। এ সবই সম্ভব হয়েছে জাতির পিতার দেখানো পথে চলে।’
ফিরিয়ে আনা হবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের
আলোচনা শেষে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে কথা বলছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্র এর আগে বঙ্গবন্ধুর একজন খুনিকে হস্তান্তর করেছে। আশা করছি বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর আগে যুক্তরাষ্ট্র এই আত্মস্বীকৃত খুনিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডার ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগের বিষয়কে স্মরণ করিয়ে বলেন, সম্প্রতি টেক্সাসের মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এক আসামিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে পাঠায় কানাডা। কেননা ওয়াশিংটন মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না। কিন্তু ওয়াশিংটনে প্রেরণের পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে টেক্সাসে প্রেরণ করে যেখানে ওই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর অপর খুনিকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে চিঠি প্রদান করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আইন ও শাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি রয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী এই খুনিকে ফেরত পাঠাবে দেশটি।
আজ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান শেখ (রমা) ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করেন।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুহাম্মদ জমির, সাধারণ সম্পাদক শাম্মী আহমদ ও উপ-কমিটির অন্যান্য সদস্য। আজ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও জাপানসহ ৩০ দেশের কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন।