একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক হাজার ২৮৫ কেন্দ্রে কোনো ভোট পায়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক ধানের শীষ। অন্যদিকে ৫৮৭ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে অনিয়ম তদন্তের দাবি জানিয়েছে সুজন। নির্বাচন কমিশনের বিচার করতে রাষ্ট্রপতির কাছে এ দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান এ দাবি তুলে ধরেন। এ ছাড়া বিচারের আগ পর্যন্ত এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচন না করার আহ্বান জানান তিনি।
সুজনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১০৩ আসনের ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। ১০২ আসনের বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক ও তাদের মিত্র দলের। শুধু একটি আসনে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) জয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। ওই আসনের ৮টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে যেখানে ধানের শীষ পেয়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। ২৩ হাজার ১৯৭টি ভোটের মধ্যে ধানের শীষ পেয়েছে মাত্র ৪টি ভোট।
লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, অতীতেও নির্বাচন নিয়ে গোঁজামিল দেখা গেছে, তবে এবার ইসি ‘সোজামিল’ এ চলে গেছে। এ সোজামিল মানে হচ্ছে শতভাগ ভোট পড়া। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নির্বাচনের অনিয়মে শতভাগ বিষয়টি আসেনি।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন জানায়, ৬টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। ইভিএমে ভোটের গড় ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ। অথচ ইভিএমের বাইরে ২৯৪টি আসনে ভোটের গড় ৮০ দশমিক ৮০ শতাংশ। তাই গড়ে মোট ভোট পড়েছে ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ। ইভিএম ব্যবহারের ফলে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করতে না পারার কারণেই এমন ঘটেছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে সুজন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, এবার সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অসদাচরণ করেছে ইসি। নির্বাচনের ইতিহাসে এটি কলঙ্কজনক। ইসির দেওয়া তথ্য থেকেই তাদের পদে থাকার অধিকার চলে গেছে।
যেসব আসনের অনিয়ম নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা আছে, সেখানকার কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল আদালতে তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, অনিয়ম প্রমাণে আর কিছু দরকার হবে না। ইসির তথ্যই বলে দিচ্ছে, কমিশন জালিয়াতি করেছে। এ পেশাগত অসদাচরণ তাদের পদ থেকে অপসারণযোগ্য অপরাধ।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারটি নির্বাচনে টানা বিজয়ী বিএনপির ১৮টি আসনের ভোটের মূল্যায়ন করেছে সুজন। এতে বলা হয়, আগের প্রতিটি নির্বাচনে তাদের ভোটের হার বেড়েছে। কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনে চিত্র উল্টো। ১৮টির মধ্যে ২টিতে এবার বিএনপির প্রার্থী ছিল না। বাকি ১৬টির মধ্যে ২টিতে বিএনপির ভোট আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু বাকি ১৪টিতে অস্বাভাবিকভাবে ভোট কমেছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে ২০০৮ এর নির্বাচনে ধানের শীষের ভোট ছিল ৫৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ আর এবার সেখানে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পড়েছে ২ দশমিক ০২ শতাংশ।
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন অনিয়মের খনি। নির্বাচনপ্রক্রিয়া ভেঙে পড়লে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা বদলের সুযোগ থাকে না। আর অশান্ত উপায়ে ক্ষমতা বদল কারও জন্যই নিরাপদ নয়।
সুজনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংস্থাটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, শতভাগ ভোট পড়ার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়। মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের ভোটের ব্যবধানে অস্বাভাবিকতা, অনেক কেন্দ্রে বাতিল ভোটের অস্বাভাবিকতা, ইভিএমের সঙ্গে অন্য কেন্দ্রের ভোটের পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুজন।