দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ড নিয়ে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের সাংসদ হাজি সেলিম। গত শনিবার বিকেলে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক যান। হাজি সেলিমের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজ সোমবার প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হাজি সেলিমের ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র বলছে, শনিবার তিনটি গাড়ির একটি বহর নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে যান হাজি সেলিম। সেখানে কবর জিয়ারত করে বিমানবন্দরে যান। তবে এ সময় তাঁর সঙ্গে পরিবারের কেউ ছিলেন না। গাড়ির চালকেরাও আগে থেকে জানতেন না তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন। হাজি সেলিম সব সময় যে গাড়ি ব্যবহার করেন, ওই দিন সে গাড়িতে যাননি। চালকও ছিলেন আরেকজন।
সূত্রটি আরও জানায়, হাজি সেলিমের সফরসঙ্গী হিসেবে ঘনিষ্ঠ কেউ যাননি। তিনি (হাজি সেলিম) যাওয়ার আগে বা পরে ঘনিষ্ঠ কেউ ব্যাংকক গিয়ে থাকতে পারেন। চিকিৎসার কথা বলে তিনি ব্যাংকক গিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য হাজি সেলিমের বড় ছেলে সোলাইমান সেলিমের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফোন করা হলে সেটি অন্য একজন রিসিভ করেন এবং তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তবে সোলাইমান সেলিম গতকাল রোববার একুশে টেলিভিশনের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, তাঁর বাবা এখন দেশে নেই। এ বিষয়ে জানতে হাজি সেলিমের ব্যক্তিগত সহকারী মহিউদ্দিন বেলালের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজি সেলিমের ১০ বছর সাজা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজি সেলিমকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই সময়সীমার মধ্যেই আওয়ামী লীগের এই সাংসদ দেশ ছেড়েছেন।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় হাজি সেলিমের সংসদ সদস্য পদ আর নেই। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশ যেতে পারেন না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার কারণেই বিদেশে যেতে পারেননি। হাজি সেলিমেরও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাঁর তো আত্মসমর্পণ করার কথা।’
দুর্নীতির মামলায় এক যুগ আগে বিচারিক আদালতের রায়ে সাংসদ হাজি সেলিমের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাজি সেলিম হাইকোর্টে আপিল করেন।
এই আপিলের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়।
এ অবস্থায় হাজি সেলিমকে দেশত্যাগে সহায়তাকারীরা অপরাধ করেছেন বলে মনে করছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক)। তিনি গতকাল একুশে টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘এই ক্ষেত্রে তাঁর (হাজি সেলিম) সাজা হয়েছে বিচারিক আদালতে। আপিল প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতেও তাঁর সাজা বহাল রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার আদেশ দিয়েছেন। সে অবস্থায় সেই ব্যক্তি কোনোভাবেই দেশত্যাগ করতে পারেন না। যাঁরা তাঁকে দেশত্যাগ করতে সাহায্য করেছেন, তাঁরা মস্ত বড় অপরাধ করেছেন। তাঁরা সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন। এখন তিনি দেশে ফিরে না এলে তখন কী হবে? সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনাও কম।’