হেফাজত ইসলামের ঘাঁটি হাটহাজারীতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ নেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, এতে সেখানে নানা সাংগঠনিক দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। হেফাজত কিংবা অন্য বিরোধী শক্তিকে মোকাবিলা করার মতো কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগের নেই।
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নেতারা তাঁদের হতাশার কথা জানান। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা হেফাজতে ইসলামকে ঠেকাতে দলের সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন।
হাটহাজারীতে ২০ দিনের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা এবং দ্রুততর সময়ে সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মহাজোটের সাংসদ নিয়ে কেউ কথা বলেননি। তবে দলীয় সাংসদ না থাকার কারণে কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা তৃণমূলের নেতারা তুলে ধরেছেন। একইভাবে ফটিকছড়িতেও দলীয় সাংসদ না থাকার কথা উঠেছে।হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী
রাত সাড়ে নয়টায় সভা শেষ হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা একই স্থানে আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সংসদীয় আসনভিত্তিক ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় সভা শুরু করেছেন। এসব সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ এবং স্থানীয় সাংসদেরা উপস্থিত থাকছেন।
রাতে অনুষ্ঠিত সভায় সম্প্রতি হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হাটহাজারীতে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় আওয়ামী লীগ খুব বেশি সক্রিয় ছিল না বলে আলোচনা হয়। সে সময় দলীয় সাংসদ না থাকার বিষয়ে কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ কারণে সেখানে সংগঠন দুর্বল বলে মত দেন তাঁরা।
হাটহাজারীতে ২০ দিনের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা এবং দ্রুততর সময়ে সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, মহাজোটের সাংসদ নিয়ে কেউ কথা বলেনি। তবে দলীয় সাংসদ না থাকার কারণে কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা তৃণমূলের নেতারা তুলে ধরেছেন। একইভাবে ফটিকছড়িতেও দলীয় সাংসদ না থাকার কথা উঠেছে। তবে সব মিলিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন নেতারা। ভবিষ্যতে হেফাজত বা বিএনপি–জামায়াতকে মোকাবিলা করার মতো সাংগঠনিক ভিত তৈরি করতে হবে বলেন নেতারা।
২০০৮ সাল থেকে হাটহাজারীতে আওয়ামী লীগের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টির সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আসছেন। গতকালের সভায় বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতা বা মন্ত্রীদের হাটহাজারী মাদ্রাসায় যাওয়া, সেখানে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও হেফাজত নেতাদের প্রশংসা করা নিয়েও সমালোচনা করেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা। এ ছাড়া দলের অনৈক্য নিয়েও কথা হয়।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে ২০ দিনের মধ্যে হাটহাজারী থানা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে বলা হয়েছে। সেটা এক মাসও হতে পারে। পাশাপাশি যেসব ইউনিয়ন, যুবলীগ ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়নি, সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি দল শিগগির হাটহাজারীতে যাবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানান আমিনুল ইসলাম।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। এ ছাড়া হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আজ সকাল ১০টা থেকে চট্টগ্রাম-৪, ৫ ও চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসনের সঙ্গে প্রথম সভা করেছেন নেতারা। তাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, স্থানীয় সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, দিদারুল আলম ও নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন উপস্থিত রয়েছেন। এরপর পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম-১৩, ৯ ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাংসদ ও তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। আগামীকাল সোমবার নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং সহসভাপতিদের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় সভার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।