বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে সন্ত্রাসীরা গণতন্ত্রকামী ছাত্রদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন করেছে। কী দুর্ভাগ্য, একবারও দেখা গেল না প্রধান বিচারপতি কোনো স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিলেন। কোন জায়গায় তারা (আওয়ামী লীগ) দেশকে নিয়ে গেছে। তারা দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় সেবা খাতে পরিণত করেছে।
ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর গতকাল বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সভার আয়োজন করে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘হত্যার হুমকি’ দিয়েছেন অভিযোগ তুলে ২২ মে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সভা–সমাবেশ করছে ছাত্রদল। এর পরদিন একই অভিযোগে ঢাবির টিএসসি এলাকায় কর্মসূচি চলাকালে ছাত্রদলের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এর পর থেকে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘাত রক্তাক্ত রূপ নেয়। বিএনপির অভিযোগ, গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাবি এলাকায় ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ৪৭ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগের হামলা থেকে রক্ষা পেতে হাইকোর্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। সেখানেও অনেক ছাত্রদলের নেতা–কর্মী মারধরের শিকার হন।
এনপিপির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত পরশু আহত নেতা–কর্মীদের দেখতে গিয়েছিলাম। চিন্তা করা যায় না, কীভাবে একজন মানুষকে এভাবে পিটিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি ঠেলে দেওয়া যায়। আমাদের একজন মেয়ে তাঁর ওপর এত ন্যক্কারজনকভাবে হামলা হয়েছে যে সে এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এটাই আওয়ামী লীগের আসল চেহারা।’
আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দলটির জন্মের শুরু থেকেই সন্ত্রাস করছে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলটির প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে মুহসীন হল থেকে বের করে দিয়েছে। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে মওলানা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি করেছেন।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ১৩ বছর ধরে বিএনপি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ রয়েছে। ৬০০ নেতা–কর্মীকে গুম করে ফেলা হয়েছে। সহস্রাধিক নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ইতিমধ্যে সব রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যে পৌঁছার জন্য কাজ করছি। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী কারণ, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর শেখ হাসিনা সম্পূর্ণভাবে একজন গণতন্ত্রবিরোধী। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সব রাজনৈতিক নেতারা একমত হয়েছেন। বিশ্বাস করি, এটিকে রূপ দিতে পারব। সেখান থেকে আমরা এই সরকার পতনের বৃহত্তর গণ–আন্দোলন শুরু করতে পারব।’
এ সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো.আবদুল হালিম বলেন, ‘বর্তমান আন্দোলন এককভাবে বা জোটগতভাবে যেভাবেই হোক জামায়াতে ইসলামী আছে ও থাকবে। আজকে কথা দিচ্ছি, ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক শক্তির আন্দোলন হবে।’
গণ–অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, সরকারের নেতারা বলেছেন রাজনৈতিক আন্দোলনে বাধা দেওয়া হবে না। অথচ সব জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দেওয়ার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী সহিংসতাকে উসকে দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। ছত্রদলের এই সংগ্রাম বৃথা যাবে না। তাঁর প্রশ্ন, হাইকোর্ট রক্তাক্ত হয়েছে, বিচারপতিরা কোথায়?
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।