চলতি বছর সোনারগাঁ বাদে নারায়ণগঞ্জের সব উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। ২৩ বছর ধরে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে না। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ওই সম্মেলনে আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও আবদুল হাই ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৪ সালে আবুল হাসনাত এবং ২০১৪ সালে আবদুল হাই ভূঁইয়া মারা যান। এ দুজন ছাড়া ৫১ সদস্যের কমিটির ২০ জন বিভিন্ন সময়ে মারা যান। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মারা যাওয়ার পর বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যথাক্রমে শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মাহফুজুর রহমান দায়িত্ব পালন করলেও বিভিন্ন পদে থাকা মৃত ২০ জনের বিপরীতে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে পদগুলো এখন পর্যন্ত শূন্য রয়েছে। ২২ জনের বাইরে শুধু ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য ২৭ জনের মধ্যে সহসভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ছাড়া ২৬ জনই বয়সের কারণে অসুস্থ।
সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে আট সদস্যের উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৩ আগস্ট উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সভা করে আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। পাশাপাশি আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের সোনারগাঁয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। নেতা-কর্মীদের এ ঘোষণার পর কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সোনারগাঁ উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকা বিভাগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় নেতারা জানান, দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের না জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের একজন প্রভাবশালী সাংসদের ইশারায় তাঁর অনুগতদের দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো লিখিত ও মৌখিক নির্দেশ নেওয়া হয়নি। পরে ওবায়দুল কাদের আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশ দেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলে, যাঁরা সৎ, যোগ্য, ত্যাগী এবং স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়, তাঁদের উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির নেতৃত্বে আনতে হবে। ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী কারও নেতৃত্ব দলের নেতা-কর্মীরা মেনে নেবেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমি সব সময় দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দলে অনুপ্রবেশকারী ভূমিদস্যু কয়েকজনকে দলের নেতৃত্বে আনতে চান জেলার একজন প্রভাবশালী নেতা। এ কারণেই সম্মেলন হচ্ছে না। তবে আশা করি, শিগগিরই দলের হাইকমান্ড বিষয়টির একটি সুরাহা করে ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্বে এনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করবে।’