নতুন নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের একান্ত অনুগত বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, একইভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালও একজন কট্টর আওয়ামী লীগার এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীর খুব পছন্দের ব্যক্তি। পুরো কমিশনই সাজানো হয়েছে পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের আমলাদের দিয়ে।
আজ সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, এ সরকারের ব্যবস্থাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই। এই মুহূর্তে বিএনপির একমাত্র এজেন্ডা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার।
রুহুল কবির রিজভীর দাবি, যখনই কোনো সাংবিধানিক পদে নিয়োগের সময় এসেছে, প্রতিটা ক্ষেত্রেই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নাম শেখ হাসিনা বিবেচনা করেছেন। এর কারণ, হাবিবুল আউয়াল একজন কট্টর আওয়ামী লীগার এবং তাঁর পুরো পরিবার আওয়ামী-বাকশালি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
নবনিযুক্ত সিইসিকে ‘চরম বিতর্কিত’ বলেও মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, কাজী হাবিবুল আউয়াল আইন মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল অ্যান্ড ড্রাফটিং শাখার অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। এটি প্রশাসনিক ক্যাডারের পদ। এই পদে থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ পাওয়ার নিয়ম না থাকলেও শেখ হাসিনার বিশেষ অনুগ্রহে সেটি লাভ করেন। আইনসচিব একটি বিচার বিভাগীয় পদ। এ কারণে পদোন্নতি বিধিমালা-২০০২ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ কাজী হাবিবুল আউয়ালের নিয়োগ অবৈধ বলে রায় দেয়।
রিজভী বলেন, হাবিবুল আউয়ালকে আইনসচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার পরই আদালতের বিচারকসহ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা তাঁর অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ ছিল, বিচারকদের স্বার্থ রক্ষা না করা, বিচারকদের স্বতন্ত্র বেতন-ভাতা দিতে সরকারকে বাধা দেওয়াসহ যখন-তখন বিচারকদের বদলির মাধ্যমে হয়রানি করতেন হাবিবুল আউয়াল।
এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে বিচারকেরা পুলিশের দ্বারা চরম লাঞ্ছিত হন। এর পেছনে হাবিবুল আউয়ালের ষড়যন্ত্র ছিল বলে বিচারকেরা তখন অভিযোগ করেন। এ ঘটনার রেশে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিবকে তখন বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছিল।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ওই সময় বিচারকেরা অভিযোগ তোলেন, এই বাধ্যতামূলক অবসরের প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর গ্রহণ ও প্রজ্ঞাপন জারিতে হাবিবুল আউয়াল নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন। তখন এ ঘটনায় সারা দেশের বিচারকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে দুই বিচারকের বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ প্রত্যাহার করেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটি হাবিবুল আউয়ালকে তলব করলে তিনি সংসদীয় কমিটির কাছে সব দায় স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চান।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ওই ঘটনার পর হাবিবুল আউয়াল সরকারের ঘনিষ্ঠতা ও বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়ে ধর্মসচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরে দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব হন। এরপর অবসরে যাওয়ার আগেই হাবিবুল আউয়ালের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) বাতিল করে তাঁকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই বছরের পর বছর বাড়ানো হয়।
হাবিবুল আউয়ালের বিরুদ্ধে আদালতের রায়, সংসদীয় কমিটির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরও তাঁকে একের পর এক মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া, অবসরোত্তর ছুটি বাতিল করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব করার কথা উল্লেখ করে রিজভী মন্তব্য করেন, শেখ হাসিনার কাছে হাবিবুল আউয়াল যেন ‘মধুর তোমার শেষ যে না পাই’।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম, নির্বাচন কমিশন কাদের দিয়ে করবে, সেই বিশ্বস্তদের তালিকা চূড়ান্ত করে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। সার্চ কমিটি ছিল আইওয়াশমাত্র। কাজেই আওয়ামী-বাকশালিদের সিইসি ও ইসি নিয়োগ করা হয়েছে আরেকটি নীলনকশার নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য।’