দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলোর ‘রিমোট কন্ট্রোল’ বিএনপি-জামায়াত নামের ‘মাফিয়া’ রাজনৈতিক শক্তির হাতে বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসুর সাবেক এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে সাদ্দাম হোসেন এসব কথা বলেন৷
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে একজন ইসলাম ধর্মাবলমম্বী মানুষের যে অধিকার আছে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী একজন মানুষেরও একই রকম অধিকার আছে৷
দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত শারদীয় দুর্গোৎসবের পূজামণ্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে৷
সমাবেশে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যাদের হাহাকার আমাদের হৃদয়কে বিদীর্ণ করে দিয়েছে, তাদের চোখের জলকে ভাষা দেওয়ার জন্য, ভয়কে অভয় দেওয়ার জন্য আমরা এই প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে সংহতি জানাতে এসেছি৷ এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার রিমোট কন্ট্রোল বিএনপি-জামায়াত নামক মাফিয়া রাজনৈতিক শক্তির হাতে৷ স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা এ দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালিয়েছে৷ রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা সম্প্রীতির উৎসবকে আক্রমণ করে ফায়দা লুটতে চেয়েছে, কম্যুনাল গডফাদার হয়ে যুগে যুগে মানুষের কাছে তারা চিহ্নিত হয়েছে৷’
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে ‘রহিম’-এর মতো একই অধিকার ‘রাম’-এরও রয়েছে৷ আমরা যেভাবে নির্বিঘ্নে ঈদ উৎসব পালন করতে পারি, একই স্বাধীনতায় প্রতিটি ধর্মাবলম্বী মানুষ তাদের উৎসব পালন করার অধিকার রাখেন৷ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে৷ যারা দেশে সাম্প্রদায়িক দাবানল তৈরি করতে চায়, নির্দিষ্ট ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, তাদের না বলার সময় এসেছে৷’
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদের সাবেক সভাপতি সানওয়ারুল হক বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে৷ এটি একটি নির্দিষ্ট কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ৷ ওই মহলকে রুখে দিতে এই কর্মসূচি৷ সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক৷ যারা অন্যের ধর্মকে অবমাননা করে, তারা কী ধরনের মুসলিম, তা আমার জানা নেই৷’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের সাবেক সভাপতি এস এম রাকিব সিরাজী বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক হামলা করছে, তারাই একাত্তরে আমার মা-বোনদের নির্যাতন করেছিল৷ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় একটি গোষ্ঠী ধর্মপ্রাণ মানুষকে উগ্র করে তুলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে৷ ধর্মীয় স্বাধীনতার সাংবিধানিক অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন কেন হচ্ছে না, তার কারণ না খুঁজলে দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে৷ যারা সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে৷ এসব ঘটনার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইবোনদের কাছে সলজ্জ দুঃখ প্রকাশ করছি৷’
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল সংসদের সাবেক ভিপি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি দেখা দুঃখজনক৷ এসব ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়৷
ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত জগন্নাথ হল সংসদের সাবেক জিএস কাজল দাস বলেন, ‘প্রতিমা ভাঙচুরকারীরা কোনো ধর্মের নয়, তারা জঙ্গি-মৌলবাদী৷ ধর্মে সমস্যা নেই, সমস্যা কিছু মানুষের মানসিকতায়৷ ধর্মকে আশ্রয় করে যারা অপরাজনীতি করে, তাদের সাবধান করতে চাই৷ তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে আমরা সব সময় প্রস্তুত৷’
নাট্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক দিগার মোহাম্মদ কৌশিকের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে নাট্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বর্তমান সংসদের সভাপতি মনিরুজ্জামান মুন্না, কুইজ সোসাইটির সভাপতি নওশের আহমেদ, সাইক্লিং ক্লাবের সভাপতি তানভীর হোসেন, সাহিত্য সংসদের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন৷