বিএনপির সময়ে সাইফুর রহমানের হাতেই দেশে ‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি’র সফল বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের কর্মময় জীবন তুলে ধরতে গিয়ে আজ রোববার সন্ধ্যায় এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, পার্থক্যটা এখানে যে সাইফুর রহমান ‘সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট’ নিতে চাননি, তিনি ঋণে আবদ্ধ হতে চাননি, ঋণে ডুবে মরতে চাননি। যে কারণে অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্যে ধীরে ধীরে আগে খুঁটিটাকে শক্ত করে দেশের অর্থনীতিটাকে ওঠাতে চেয়েছেন। সে জন্য ধীরে যেতে চেয়েছেন।
ফখরুল বলেন, অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে যখন কথা বলা হয়, তখন তাঁরা একটা কথা বলেন, সাইফুর রহমান সাহেবের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব একটা স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালাহউদ্দিন আহমেদও বলতেন, সাইফুর রহমানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল যে তিনি একটা ‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি’ উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশে। তিনি বলেন, সাইফুর রহমানের সময় ব্যাংকিং সেক্টরে ডিসিপ্লিন ছিল, বিমা সেক্টরে ডিসিপ্লিন ছিল এবং শেয়ার মার্কেটে ডিসিপ্লিন ছিল—এই কথাগুলো এখন জোরেশোরে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন।
পোশাকশিল্পের বহুমুখীকরণে সাইফুর রহমানের চিন্তার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু গার্মেন্টেসে তিনি থাকতে চাননি। পোশাকশিল্পটাকে অনেক সময় ব্যঙ্গ করে বলতেন, “তুমি শুধু দরজির একটা শিল্প বানাইবা।” তিনি চাইতেন যে এই শিল্প থেকে সারপ্লাস যে ক্যাপিটালটা আসবে, সেই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে ভারী শিল্প তৈরি হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে একটা ম্যানুফেকচারিং কান্ট্রি হিসেবে তৈরি করতে তিনি চেয়েছিলেন। যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন ইপিজেডগুলোর মাধ্যমে।’
তিনি বলেন, সাইফুর রহমান কতগুলো মৌলিক কাজ করেছিলেন। ভ্যাট প্রবর্তন করেছেন চরম বিরোধিতার মুখে, যার ফলে বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণ অনেক অনেক গুণ বেড়ে গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনায় নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষায় দরিদ্র শিশুদের নিয়ে আসার জন্য তিনি শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রবর্তন করেছিলেন। এসব ছিল তাঁর সৃজনশীল পদক্ষেপ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এম সাইফুর রহমান সাহেব এমন একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি ব্যক্তি হিসেবে, পেশাজীবী হিসেবে, অর্থনীতিবিদ হিসেবে, রাজনীতিবিদ হিসেবে, মন্ত্রী হিসেবে সব ক্ষেত্রে শুধু সফল নন, দিকনির্দেশনা রেখে গেছেন। বিএনপি তাঁকে নিয়ে গর্ব বোধ করে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে এই ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা হয়।
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে নিজ গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারে যাওয়ার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সাইফুর রহমান।
সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের সদস্যসচিব এম কাইয়ুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।