রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায় গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ে মঙ্গলবার দলটির নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির নেতারা
রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায় গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ে মঙ্গলবার দলটির নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির নেতারা

সরকার হটাতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে গণসংহতি আন্দোলন

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নামছে গণসংহতি আন্দোলন। আজ মঙ্গলবার দল দুটির নেতাদের মধ্যে বৈঠকে এ বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে।

বাম গণতান্ত্রিক জোট ছেড়ে আসা গণসংহতি আন্দোলন আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য ও নুরুল হকের গণ অধিকার পরিষদসহ সাতটি দল–সংগঠন নিয়ে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতারা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান ও রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতারসহ দলটির বেশ কয়েকজন নেতা সংলাপে অংশ নেন। অপর দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

বেলা সোয়া ১২টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা চলে সংলাপ। সেখান থেকে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে যে বিষয়গুলোতে তাঁরা একমত হয়েছেন, তা হচ্ছে—এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে। সংসদ বাতিল করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠনের পর তাদের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে পার্লামেন্ট ও সরকার গঠিত হবে।

মির্জা ফখরুল মনে করেন, এই সরকারকে সরাতে না পারলে দেশে কোনো পরিবর্তন আসবে না। এ লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে তাঁরা গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে একমত হয়েছেন।

গণসংহতি আন্দোলনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, বৈঠকে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

সংলাপ শেষে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সংলাপ করে তাঁর ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে যেভাবে ভয়াবহ ভোট ডাকাতি করা হয়েছে, আগের রাতেই ভোট ব্যালট বাক্সে ভরে নেওয়া হয়েছে। তারপর বাংলাদেশের মানুষ বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব—এটা বিশ্বাস করে না।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, বর্তমান সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এই বাস্তবতার অবিলম্বে বদল হওয়া দরকার। বাংলাদেশের এই বাস্তবতার বদল একমাত্র গণতন্ত্র ফেরার মধ্য দিয়েই হতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে আমরা সমূহ বিপদের মধ্যে পড়ব। বর্তমান সরকার যেহেতু জনগণের ভোট ছাড়া জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে জনগণের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে, আন্দোলন ছাড়া আমরা মনে করি এ অবস্থা বদলের অন্য কোনো পথ নেই।’

আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পারণ সম্পাদক সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংলাপে বসবেন বলে জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শুরু হওয়া আলোচনা দ্রুত শেষ করে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে এসে তাঁরা পৌঁছাতে পারবেন।