পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলেছে, সরকার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে মানুষকে কর্মচ্যুত করছে। বিরোধী এই রাজনৈতিক জোট সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের পাটশিল্পকে ধ্বংস করে পশ্চিম বাংলার মৃতপ্রায় পাট কারখানাগুলো চালু করার নীলনকশারও অংশবিশেষ বলে প্রতীয়মান হয়।'
আজ মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্ফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো বিবৃতিতে জোটের নেতারা এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাটকলগুলোয় বর্তমানে স্থায়ী শ্রমিক আছেন ২৪ হাজার ৮৮৬ জন। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত বদলি ও দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। অর্থাৎ ৫১ হাজার কর্মীর পরিবারের অন্তত আড়াই লাখ মানুষের জীবনে এক চরম বিপর্যয় তৈরি করা হচ্ছে । এমন এক সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যখন করোনার ভয়ংকর অভিঘাতের ফলে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে । নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়া দূরে থাকুক, সরকার বর্তমানে কর্মে নিযুক্ত মানুষকেও কর্মচ্যুত করছে।’
সরকার বলেছে পাট খাতে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, ‘এক ওয়াট বিদ্যুৎ না কিনে গত ১০ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারের অতিঘনিষ্ঠ বিরাট কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা । পাট খাতে যে লোকসান হয় সেটার জন্য শ্রমিকেরা কোনোভাবেই দায়ী নন। সরকারের আর সব খাতের মতো প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণেই এই শিল্পগুলোতে লোকসান হয় । সেই ব্যর্থতার মূল্য আজ দিতে হচ্ছে শ্রমিক ভাইদের।’
ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, এর আগেও শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হয়েছে তাঁদের বকেয়া মজুরি আদায়ের দাবিতে । সরকার তাঁদের বেতন মাসের পর মাস বাকি রেখেছিল । এখন সেই শ্রমিকদের ওপর নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাটকলগুলো পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় চলবে। এর সমালোচনা করে ঐক্যফ্রন্ট জানায়, ‘শেষ পর্যন্ত এই পাটকল এবং এর সব সম্পত্তি সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হবে নামমাত্র মূল্যে । সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের পাটশিল্পকে ধ্বংস করে পশ্চিম বাংলার মৃতপ্রায় পাট কারখানাগুলো চালু করার নীলনকশারও অংশবিশেষ বলে প্রতীয়মান হয়।'
পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। এ ছাড়া এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পাটকলগুলোর শ্রমিকদের যেকোনো কর্মসূচির প্রতি তাঁরা সংহতি প্রকাশ করেন।
বিবৃতি দেন জাতীয় ঐক্যফন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন বেপারী।