রংপুর সদর আসনের উপনির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এখনো সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব জানা–বোঝার চেষ্টা করছেন, মহাজোটের সমঝোতায় পাওয়া প্রয়াত এইচ এম এরশাদের এই আসন নিয়ে সরকারের মনোভাব কী বা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটির ধরন কেমন হবে।
জাপার উচ্চপর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের নেতৃত্ব এবং রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে রওশন ও জি এম কাদেরে বিভক্ত হয়ে পড়া জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের দুটি পক্ষই অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে সাক্ষাৎ করার। তারা মনোনয়নসহ দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারপ্রধানের মনোভাব স্পষ্ট হতে চায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই সাক্ষাৎ পায়নি। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে হঠাৎ করে জি এম কাদেরকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নিযুক্ত করার চিঠি। দলের ২৫ জন সাংসদের মধ্যে ১৫ জনের স্বাক্ষরে গত মঙ্গলবার স্পিকারকে দেওয়া এই চিঠিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক আরও জেগে উঠেছে। এ অবস্থায় একদিকে প্রার্থী মনোনয়ন, অন্যদিকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদসহ দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ সরকারি মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে।
>রংপুরে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে রওশন ও কাদেরের দ্বিমুখী তৎপরতা
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে দলে বিরোধ
দলের বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা
তবে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, জাপার শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে রংপুরের উপনির্বাচনে সমঝোতার নির্বাচন হবে না। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেবে। গতকাল বুধবার সকালে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। আলোচনায় জাপাকে তাদের মতো করে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে বলা হয়েছে। তাঁরা জাপার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জড়াতে চান না।
অবশ্য জাপার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের অনেকে মনে করছেন, সরকারের শীর্ষ মহলের সাক্ষাৎ না দেওয়ার অনাগ্রহের অর্থ দলের নেতৃত্ব ও প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দুই পক্ষকেই ঝুলিয়ে রাখা। আর দ্বন্দ্ব জিইয়ে থাকলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।
এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসনটি শূন্য হয়। নির্বাচন কমিশন আগামী ৫ অক্টোবর ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে। জাপা থেকে পাঁচজন আর আওয়ামী লীগ থেকে সাতজন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ও মহানগর কমিটির সভাপতি সাফিউর রহমান। জাপার গুরুত্বপূর্ণ চার মনোনয়ন প্রার্থী হলেন ফখর-উজ জামান জাহাঙ্গীর, এস এম ইয়াসির, মেহেজেবুন নেছা ও রাহগীর আল মাহির ওরফে সাদ এরশাদ।
বিরোধী নেতা প্রসঙ্গ
দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে রওশন ও কাদেরের দ্বিমুখী তৎপরতার মধ্যে সামনে এল জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার প্রসঙ্গ। এমনিতেই রওশন ও তাঁর সমর্থক অংশটি জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানতে রাজি নন। কাদেরকে সরিয়েই এরশাদ জীবদ্দশায় স্ত্রী রওশনকে বিরোধীদলীয় উপনেতা বানিয়েছিলেন। এখন কাদের দলের চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেতা হলে রওশনের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীদের অনেকে। এ অবস্থায় জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য জাপার সাংসদদের পক্ষ থেকে স্পিকারকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাকে অবৈধ বলে গতকাল পাল্টা চিঠি দিয়েছেন রওশন এরশাদ। সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে আজ দুপুর ১২টায় গুলশানের বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন রওশন এরশাদ।
এ বিষয়ে রওশনপন্থী বলে পরিচিত জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ ফখরুল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই সিদ্ধান্ত সংসদীয় দলের সভা ছাড়া হবে না।’
অবশ্য জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমাকে সরিয়ে রওশন এরশাদকে যখন উপনেতা করা হয়, তখনো এভাবে করা হয়েছিল।’