কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

সম্পদে এগিয়ে মনিরুল, কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন আরফানুল

মো. মনিরুল হক,আরফানুল হক
মো. মনিরুল হক,আরফানুল হক

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে সদ্য বিদায়ী মেয়র ও বিএনপির সাবেক নেতা মো. মনিরুল হক ওরফে সাক্কুর সম্পদ সবচেয়ে বেশি। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর সম্পদ কয়েক গুণ বেড়েছে। তাঁর থেকে সম্পদে পিছিয়ে থাকলেও দামি গাড়িতে চড়েন আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আরফানুল হক। তাঁর দুটি গাড়ির মধ্যে একটির দাম ১ কোটি ২ লাখ টাকা।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীর কাছে দাখিল করা হলফনামায় মেয়র প্রার্থীরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলা, পেশা, আয়ের উত্স, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছেন। হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ছয় মেয়র প্রার্থীর সম্পদ

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে মনিরুলের সম্পদ সবচেয়ে বেশি। গতবারের চেয়ে (২০১৭ সালের ৩০ মার্চের সিটি নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী) তাঁর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। তাঁর স্ত্রী আফরোজা জেসমিনেরও সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ।

বাড়িভাড়া থেকে মনিরুলের বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে সেই আয় ছিল ৭২ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৯৭ টাকা; আগেরবার ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৭৪ টাকা। দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হিসেবে বার্ষিক সম্মানী ভাতা পেয়েছেন ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগেরবার সম্মানী ভাতা পেয়েছিলেন ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

মনিরুলের অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২ টাকা। পাঁচ বছর আগে ছিল ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩০৬ টাকা। মনিরুলের স্ত্রী আফরোজা জেসমিনের নামে নগদ টাকা আছে ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ টাকা। পাঁচ বছর আগে স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা ছিল ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫২৩ টাকা।

জানতে চাইলে মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘হোটেল ব্যবসা, ঠিকাদারি, বাড়ি ও দোকানভাড়া থেকে আয় বেড়েছে। যে কারণে সম্পদ বেড়েছে।’

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুলের কৃষি খাত থেকে বার্ষিক আয় ১০ হাজার টাকা, বাড়ি ও দোকানভাড়া থেকে ৫ লাখ টাকা ও ব্যবসা থেকে আয় ১৭ লাখ ১১ হাজার ৮০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ব্যাংকে জমা আছে ৬ লাখ ১২ হাজার ৪৯৫ টাকা, সঞ্চয় আছে ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৪ টাকা। গাড়ি দুটি ও সোনা আছে ২০ ভরি। দুটি গাড়ির মধ্যে একটি জিপের দাম ১ কোটি ২ লাখ টাকা আর কারের দাম ২০ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে সালমানপুরে ১৭ শতক, ঢাকায় ৪০ লাখ টাকার একটি ও কুমিল্লায় ৩০ লাখ টাকার একটিসহ মোট দুটি ফ্ল্যাট আছে।

আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়র প্রার্থী মাসুদ পারভেজের কৃষি খাত থেকে বার্ষিক আয় ২০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা আছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪২ টাকা, ব্যাংকে জমা ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৫৮ টাকা, গাড়ি একটি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে শাতকলা মৌজায় ৭৭ দশমিক ৬৬ শতক জমি ও লালমাই পাহাড়ে ১ দশমিক ১২ একর বাগান আছে।

কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ওরফে কায়সারের চাকরি থেকে আয় ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ টাকা, ব্যাংকে জমা ৩ লাখ ২ হাজার ৪৯৭ টাকা। অপর মেয়র প্রার্থী কামরুল হাসানের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫ হাজার টাকা, স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার অকৃষিজমি আছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলামের শিক্ষকতা থেকে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা, অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৫০ হাজার, ব্যাংকে জমা ২ লাখ ৪২৮ টাকা ও স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৮ দশমিক ২৫ শতক অকৃষিজমি ও একটি বাড়ি আছে।

মামলার তথ্য

মনিরুলের বিরুদ্ধে বর্তমানে দুটি মামলা রয়েছে। দুদকের করা একটি মামলা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও স্পেশাল জজ আদালতে ও আয়কর বিভাগের করা একটি মামলা কুমিল্লা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে চলমান।

আরফানুলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা ছিল। সেই মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছিলেন। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধেও কোনো মামলা নেই। মামলা বেশি নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। সব মামলাই কুমিল্লার আদালতে বিচারাধীন।

আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ তথা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খানের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মারামারি ও বিস্ফোরক আইনে একটি এবং চট্টগ্রাম বিশেষ ট্রাইবুন্যাল আদালতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলাসহ মোট দুটি মামলা আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন। হলফনামার ২(খ) কলামে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত অংশে প্রার্থীরা ওই বিবরণ দেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশা

অর্থসম্পদে এগিয়ে থাকলেও শিক্ষাগত যোগ্যতায় পিছিয়ে আছেন মনিরুল; তিনি এসএসসি পাস। তাঁর পেশা ঠিকাদারি। আবার টাকাপয়সা কম থাকলেও শিক্ষায় এগিয়ে আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম; তিনি কামিল পাস। আরফানুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম ও পেশা ঠিকাদারি। নিজামের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম, পেশা চাকরি। মাসুদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসএস ও পেশা ব্যবসা। কামরুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি আর পেশা ব্যবসা। রাশেদুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা কামিল এবং তিনি পেশায় শিক্ষক।