জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় সংবিধান পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, সংবিধান থেকে সামরিক শাসকদের বুটের ছাপ ও গোঁজামিল দূর করতে হবে।
জাসদের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন। জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু রাষ্ট্র-শাসন-প্রশাসনব্যবস্থাকে আরও গণতান্ত্রিক ও অংশীদারত্বমূলক করতে জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি চালু, কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সিটি করপোরেশন-জেলা পরিষদ-উপজেলা পরিষদ-ইউনিয়ন পরিষদ-পৌরসভাসহ সব স্থানীয় সরকারকে স্বশাসিত ও কার্যকর সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংবিধান পর্যালোচনা করার প্রস্তাব করেন তিনি।
জাসদ সভাপতি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় দেশে গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, জীবনযাপনের মান বৃদ্ধি, চরম দারিদ্র্য হ্রাস, বিদ্যুতায়ন ও যোগাযোগ অবকাঠামোর সম্প্রসারণসহ দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও লুটপাট, দলবাজি ও গুণ্ডাতন্ত্র, আর্থসামাজিক বৈষম্য এই চারটি বিপদ প্রতিনিয়ত বড় হয়ে উঠছে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রু ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ নির্মূল করে সাম্প্রদায়িক হামলা পুনরাবৃত্তি চিরতরে বন্ধ করে রাজনৈতিক ও সামাজিক শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-দলবাজ ও গুন্ডাদের রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের ছায়া থেকে বের করে দিতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান করে অপরাধী যে–ই হোক, তাদের বিচার ও শাস্তির সম্মুখীন করতে সুশাসন এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
মুক্তবাজার অর্থনীতির ‘ভ্রান্ত ধারণা’ থেকে বেরিয়ে সমাজতন্ত্রের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি গণ–আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান হাসানুল হক ইনু। নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জাসদের ৪৯ বছরের ইতিহাস প্রমাণ করে, জাসদ নেতাদের দল নয়, কর্মীদের দল। দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, নেতারা দলের পাহারাদার মাত্র।
সভায় অন্যদের মধ্যে জাসদের কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মেশাররফ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি মীর হোসাইন আখতার, আফরোজা হক রীনা, নুরুল আখতার, ফজলুর রহমান বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, সহসভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম, শফি উদ্দিন মোল্লা, মোহর আলী চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন, নইমুল আহসান জুয়েল, মো. মোহসীন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, মীর্জা মো. আনোয়ারুল হক, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় কৃষক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন কাউছার, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি মাইনুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সভাপতি মহিবুর রহমান, জাতীয় যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি আহসান হাবীব শামীম বক্তব্য দেন।