দলীয় রাজনীতিসহ বিভিন্ন লাভজনক খাতও সাংসদ শফিকুলের নিয়ন্ত্রণে। এটাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত।
নাটোরের ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন কমিটির অন্তত ১৪টি পদই সাংসদ শফিকুল ইসলাম (শিমুল) ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দখলে। দলীয় রাজনীতি ও কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন লাভজনক খাতও সাংসদ শফিকুল ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ন্ত্রণে। এটাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে একদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের (নাটোর-২) সাংসদ শফিকুল ইসলাম, অন্যদিকে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ বাকি তিনটি আসনের সাংসদ এবং সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাও এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে আগামী ২১ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিন বছর মেয়াদি কমিটি সাত বছর পর হালনাগাদ হতে যাচ্ছে। বিবদমান দুই পক্ষ একে অপরকে পেছনে ফেলতে মাঠে নামায় উত্তেজনাও বেড়েছে।
দলটির স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সাংসদ শফিকুল ইসলামকে ঠেকাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাটোর-৪ আসনের সাংসদ আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে এককাট্টা হয়েছেন নাটোর-৩ আসনের সাংসদ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, নাটোর-১ আসনের সাংসদ শহীদুল ইসলাম এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রত্না আহমেদ। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মালেক শেখ এবং নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ। তাঁরা গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে চিঠি দিয়ে শফিকুলের বিরুদ্ধে দলে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিএনপি-জামায়াতের লোকদের পুনর্বাসনের অভিযোগ এনেছেন।
অন্যদিকে শফিকুল ইসলাম ২০১৪ সালের নভেম্বরে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন কমিটিতে পছন্দের নেতাদের বসিয়ে দলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন।
নাটোর আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব ব্যাপকভাবে প্রকাশ্যে আসে গত ২৭ জুন। ওই দিন এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আবদুল কুদ্দুস বলেন, তিনি জেলা সদরে যেতে পারেন না। দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে তিনি জেলা সদরে একটি বাসা ভাড়া করতে চেয়েছিলেন। বায়নাও করেন। কিন্তু সাংসদ শফিকুলের চাপে বাড়িওয়ালা বায়না ফেরত দিয়েছেন।
* জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে দুই পক্ষ মুখোমুখি। * দলের বিভিন্ন কমিটিতে আছেন শফিকুল পরিবারের ১৪ জন। * ২১ নভেম্বর জেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা।
পাঁচবারের সাংসদ এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রীর কান্নাজড়িত ওই বক্তব্যের ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। নাটোরের এই বিষয় গত ৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও আলোচিত হয়। এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় কোনো কোনো নেতা অভিযোগ করেন যে নাটোরে শফিকুল ইসলাম ‘দানব’ হয়ে উঠেছেন। এরপরই জেলা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পক্ষ-বিপক্ষ সারা দেশেই আছে। তবে নাটোরে কাউন্সিলররাই পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করবেন। তখন সবাই একযোগে কাজ করবেন।
দীর্ঘদিন নাটোর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৫ সালে মারা যাওয়ার পর সাজেদুর রহমান সভাপতি ও হানিফ আলী শেখ সাধারণ সম্পাদক হন। এ সময় মূলত হানিফ আলী শেখই দলের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন। এর মধ্যে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদর আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আহাদ আলী সরকার। ২০১১ সালে হানিফ আলী শেখ মারা গেলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহাদ আলী সরকার হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আর মনোনয়ন পাননি। এরপরই দলীয় রাজনীতিতে সামনে চলে আসেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দেওয়া শফিকুল ইসলাম। তিনি ২০১৪ সালে সদর ও নলডাঙ্গা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন। ওই বছরই দলের সাধারণ সম্পাদক হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির প্রভাবশালী নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদারকে চাপে রাখতে পেশিশক্তি আছে এমন কাউকে খুঁজছিল দল। তখনই শফিকুলের আবির্ভাব। আবদুল কুদ্দুসকে ‘মুরব্বি’ হিসেবে সভাপতি করা হয়। শফিকুলকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু অল্পদিনেই শফিকুল একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপর হন। নিজের স্বজন ও অনুসারীদের জেলা ও উপজেলায় দলের বিভিন্ন পদে নিয়ে আসেন। ফলে অন্য সাংসদদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে শফিকুলের।
নাটোরের সিংড়ায় ২০০৮ সাল থেকে সাংসদ তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ। স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানায়, ছাত্রজীবনে জুনাইদ ছিলেন শফিকুল ইসলামের কর্মী। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। জুনাইদকে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদেই রাখেননি শফিকুল। এমনকি জেলার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতি খুব একটা নেই। দুজনের মধ্যে ক্রমেই দূরত্ব তৈরি হয়। ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে দুজনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলা কমিটির দলীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুস শুরুতে শফিকুলের সঙ্গে মিলেমিশেই চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকেও কোণঠাসা করে ফেলেন শফিকুল। গত উপজেলা নির্বাচন ঘিরে শফিকুল ও আবদুল কুদ্দুসের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে। এরই মধ্যে জুনাইদ আহমদের সঙ্গে ভেতরে-ভেতরে ঐক্য গড়ে ওঠে আবদুল কুদ্দুসের।
জেলার আরেক সাংসদ শহীদুল ইসলাম শুরুতে অনেকটা নিরপেক্ষই ছিলেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে তাঁর সঙ্গেও শফিকুলের দ্বন্দ্ব বেধে যায়। এরপর শহীদুলও আবদুল কুদ্দুসদের পক্ষে চলে যান।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ওরফে রমজান ২০১৪ সালে শফিকুলের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আগেই ছিল। নলডাঙ্গা উপজেলার চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানও শফিকুলবিরোধী হিসেবে পরিচিত। এঁরা এখন শফিকুলবিরোধী জোট শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
বর্তমান জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলোতে শফিকুল ইসলাম অনুসারীদের আধিক্য। ফলে তিনিও চার সাংসদ ও অন্য নেতাদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন।
নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা শফিকুলের নির্বাচনী এলাকায়। এই দুই উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন পান শফিকুলবিরোধী শরিফুল ইসলাম ও আসাদুজ্জামান। দুজনেই সহজে জয় পান।
সিংড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শফিকুল ইসলাম। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। কিন্তু সেখানে বিদ্রোহী হিসেবে ভোট করেন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা আদেশ আলী সরদার। স্থানীয় সাংসদ জুনাইদ আহ্মেদ ভেতরে-ভেতরে তাঁকে সমর্থন দেন। সাংসদ শফিকুল ইসলাম সর্বশক্তি নিয়োগ করে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনেন। এতে শফিকুল ও জুনাইদের মধ্যে তিক্ততা আরও বাড়ে।
জানতে চাইলে জুনাইদ আহ্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের কোথাও রাখা হয়নি। তাই তিনি জেলার রাজনীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।
জেলা সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের এলাকা বড়াইগ্রামে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। তবে জেলা সভাপতিবিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেনকে। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রকাশ্যেই মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে ভোট চান আবদুল কুদ্দুস। আর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তৎপর ছিলেন জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুল। শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীই জয়ী হন।
এর জেরে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বড়াইগ্রাম। গত বৃহস্পতিবার বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান দেখামাত্র সাংসদ আবদুল কুদ্দুসের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এরপর বড়াইগ্রাম উপজেলা কমিটি সিদ্দিকুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
গুরুদাসপুরেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষ নেন জেলা সাধারণ সম্পাদক। আর বিদ্রোহীর পক্ষ নেন জেলা সভাপতি। জয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী। আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী কেন এবং কোন পরিপ্রেক্ষিতে সমর্থন দেওয়া হয়েছে, এটা সবাই জানে।
বাগাতিপাড়া উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন সেখানকার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী। তিনি শফিকুলের সমর্থক। কিন্তু স্থানীয় সাংসদ শহীদুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান ভাই অহিদুল ইসলামকে। দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে অহিদুল জয়ী হন।
সেকেন্দার আলী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ২৬ বছর ধরে দলের বিভিন্ন পদে আছেন। সাংসদের ভাই কোনো সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। এরপরও জোর করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শফিকুলের সঙ্গে বাকি সাংসদের দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে তৃণমূলের রাজনীতিতে। এখন লালপুর, বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার সব ইউনিয়নে দুই পক্ষের আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে। দলীয় কর্মসূচিও পালিত হয় আলাদাভাবে।
শফিকুল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে তাঁর পরিবারের কেউ দলের পদে ছিলেন না। এখন তাঁর স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
শফিকুলের বড় ভাই শরিফুল ইসলাম জাসদের রাজনীতি করতেন। তিনি এখন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। শরিফুলের স্ত্রী সীমা পারভিনকে করা হয়েছে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তাঁদের ছেলের শ্বশুর জহুরুল ইসলাম সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সাংসদের আরেক ভাই সিরাজুল ইসলাম ২০০৪ সালের নাটোর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তিনি এখন পৌর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম পৌর যুবলীগের সদস্য। তাঁর স্ত্রী সিনথিয়া ইসলাম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
শফিকুল ইসলামের বোন নাসিমা চৌধুরী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। তাঁর স্বামী সাজেদুর রহমান ওরফে বুড়া চৌধুরী জেলার সদস্য। অথচ সাজেদুরের বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন নাটোর জেলা বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
সাংসদের অপর বোন নাজমীন ইসলাম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর স্বামী মীর আমিরুল ইসলাম জেলার কোষাধ্যক্ষ। এই দম্পতির ছেলে নাফিউল ইসলাম পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক (সম্প্রতি বহিষ্কৃত হন)। সাংসদের বড় ভগ্নিপতি আবদুল মতিনের ছোট ভাই খন্দকার ওমর শরীফ চৌহান জেলা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।
জেলা সভাপতি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘এককালে রাজরাজন্যের জেলা ছিল নাটোর। রীতি অনুসারে রাজপরিবারের সদস্যরাই রাজা-রানি হতেন, রাজ্য চালাতেন। জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুল পরিবারের সদস্যদের দলের বিভিন্ন কমিটিতে স্থান দিয়ে প্রাচীন এই ঐতিহ্য অনুসরণ করেছেন। এর জন্য আমরা গর্বিত। এর বেশি আর কী বলব?’
অন্যদিকে সাংসদ শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক না থাকলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আরও বড় পদ পেতেন।
স্থানীয় নেতারা জানান, বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর আকরামুল ইসলাম এখন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। জেলা তাঁতি দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান এখন জেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক।
জেলা শ্রমিক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনছুর সরকার এখন শ্রমিক লীগের সদস্য। মারুফ আরাবিয়া, সেলিম হোসেন, আবদুল্লাহ হেল কোয়েল, মাসুদ রানা—সবাই বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা ছিলেন। সাংসদ শফিকুল ইসলাম নাটোরে অবস্থানকালে তাঁদের আশপাশে দেখা যায়।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁদের দ্বারা আমরা নির্যাতিত হয়েছি, তাঁরাই এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে চেয়ার ভাগাভাগি করছেন। এটা খুবই কষ্টকর।’
শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দলের স্বার্থেই সব করেছেন। তাঁর দাবি, বিএনপি-জামায়াত নাটোরে বের হতে পারে না তাঁর কারণে। জেলার অন্য সাংসদের এলাকায় অবাধে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
স্থানীয় নেতারা বলছেন, গত সাত বছর নাটোরে শফিকুল ইসলামের ভয়ে দলের নেতারা কেউ মুখ খোলেননি। এখন চার সাংসদ এবং শীর্ষ নেতারা এককাট্টা হওয়ায় পাল্টা একটা শক্তি তৈরি হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটিতে শফিকুলবিরোধীদের অবস্থান শক্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শফিকুলের পরিবার ও স্বজনদের বাদ দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে।
● আগামী পর্ব: বিএনপি এখনো দুলুময়