বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নির্বাচনে নাশকতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির নির্দেশনা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ অভিযোগ করেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোটকেন্দ্র দখলের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁরা সংঘবদ্ধভাবে গেরিলা কায়দায় ভোট কেন্দ্র দখলের হুমকি দিয়েছেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট উৎসবকে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ব্যাপক সহিংসতা, অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটিয়ে এরই মধ্যে ভীতি সৃষ্টির চক্রান্ত চালাচ্ছে। ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ও নকল বুথ বানিয়ে সিল মারা নকল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর নীলনকশা করছে।
আওয়ামী লীগ নেতা নানক অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট একাধিক সংগঠনকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে হাজার হাজার দলীয় নেতা-কর্মীকে পর্যবেক্ষক হিসেবে মাঠে নামানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খানের সংস্থা খান ফাউন্ডেশন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমানের ডেমোক্রেসি ওয়াচ, তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বগুড়া ভিত্তিক লাইট হাউস, বিতর্কিত আইনজীবী আদিলুর রহমানের বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদ এবং বিদেশি লবিস্ট ফার্ম ‘এনফ্রেল’ নামের একটি সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, এসব সংস্থার নামে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে পর্যবেক্ষক হিসেবে মাঠে নামানো হচ্ছে। এ ধরনের দলীয় প্রতিষ্ঠানের নামে সাড়ে ছয় হাজার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এরা দলের পক্ষে কাজ করে নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বিনষ্ট করতে তৎপরতা চালাতে পারে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন বিতর্কিত পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং ইউরোপের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য প্রণীত কোড অব কনডাক্ট বিরোধী। আওয়ামী লীগ এ ধরনের পক্ষপাত দুষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিতে অনুরোধ জানিয়েছিল। তারা নির্বাচনী পর্যবেক্ষণের কাজ করলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাবে। তাই তাদের বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
সারা দেশে নৌকার প্রার্থীদের ওপর হামলার তথ্য দিয়ে নানক বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি-জামায়াত ঐক্যফ্রন্ট সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিয়ে গতকাল সিলেটে কাওসার আহমেদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। চারজনকে আহত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের আটটি অফিসে ও গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। চারটি স্থানে বোমা হামলা করা হয়েছে। গতকাল দিনাজপুরে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে। তাঁর হাতের দুটি আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে। আজ দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় আহত ডাক্তার মাহবুবুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার বর্ণনা দিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা ছয়জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। তাদের হামলায় ৪৪৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। ১৭৮টি আওয়ামী লীগ অফিস, গাড়িবহর ও নির্বাচনী কেন্দ্র ভাঙচুর করা হয়েছে। ৫৮টি বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ৮৮টি অফিস ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে ৫৪টি জেলার ১৭০টি আসনে বিএনপি-জামায়াত এই ধরনের সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। এসব বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান নানক।
সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিএনপির উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ করে নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ আমাদের দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে লাগাতার মিথ্যাচার চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও আইন মোতাবেক সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করেছে। সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮৯টি উপজেলায় এবং ১৮টি উপজেলায় নৌবাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করায় বিএনপির নাশকতা পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায়, বিএনপি নেতারা এখন সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য করতে শুরু করেছে। পেশাদার, সুশৃঙ্খল, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে এই ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াত শুধু ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করছে না। তারা আওয়ামী লীগের ব্যাচ, নৌকার ব্যাচ, নৌকার মনোগ্রাম সংবলিত শীতকালীন মাফলার ও গেঞ্জি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সেই দায় দায়িত্ব আওয়ামী লীগের মাথায় চাপিয়ে দিয়ে তারা একটি অপপ্রচারের ষড়যন্ত্র করছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুর সবুরসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।