আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দলের পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ডেকে নিয়ে ব্রিফ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের কাছে এই অভিযোগ জমা দেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেকে নেওয়ার বিষয়টি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিএনপি এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এ ছাড়া পৃথক চিঠিতে বিএনপির পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনে রদবদলের দাবি জানানো হয়।
এ সময় মোয়াজ্জেম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে এখন আর “সমতল” পরিস্থিতি বলে কিছু নেই। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ডেকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। এই অবস্থা চললে আমরা থাকব গিরিখাতে, আর ওনারা থাকবেন পর্বতশৃঙ্গে।’
ইসি ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করে। নির্বাচনের জন্য ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে বিএনপির অভিযোগ বলা হয়, ইসি ১৩ নভেম্বর নির্বাচনসংক্রান্ত ধারণা দেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ঢাকায় ডেকে আনে। অনুষ্ঠান শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তারা যখন কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছিলেন তখন জরুরি ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাঁদের তলব করা হয়। সেখানে নির্বাচনে সরকারি দলের পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফ করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেলিফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করলে এবং ওই দিনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরাতে ধারণ করা ফুটেজ পরীক্ষা করলে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হবে।
বিএনপির চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের অধীন। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এসব কর্মকর্তাদের কীভাবে ডেকে পাঠানো হলো। বিষয়টি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্তরায়।
এদিকে আজই ইসিতে দেওয়া আরেক চিঠিতে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদলের দাবি করা হয়েছে।
চিঠিতে বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের উপমহাপরিদর্শক ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারদের প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও মেট্রোপলিটন এলাকার উপপুলিশ কমিশনারদের মধ্যে যাঁরা বর্তমান কর্মস্থলে দুই বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন, তাঁদের প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জেলার বাইরে বদলি এবং সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের দাবি জানানো হয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর ইসির অনুমতি ছাড়া জেলা জজের নিচের পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং জেলায় কর্মরত তাঁদের অধীন কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করা যাবে না।