রংপুরের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে কি না, এটাই এখন নির্বাচনী এলাকায় মূল আলোচনার বিষয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে আছে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে কোনো বার্তা আসতে পারে—এই আশায় আছে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুর–৩ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৫ অক্টোবর ভোট গ্রহণ করা হবে। কাল সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ফলে এই উপনির্বাচন মহাজোটগতভাবে হচ্ছে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও শেষ হয়ে আসছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক হিসেবে এরশাদকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ জন্যই জাতীয় পার্টির নেতা–কর্মীরা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে উপনির্বাচনেও ছাড় আশা করছেন।
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি—এই তিন দলের প্রার্থীরাই মাঠে আছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। জাতীয় পার্টির প্রার্থী রওশনপুত্র সাদ এরশাদ। আর বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমান। এর বাইরে এরশাদের ভাতিজা ও জেলা জাপার সাবেক সদস্যসচিব আসিফ শাহরিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সূত্রগুলো বলছে, রংপুর–৩ বরাবরই এরশাদের আসন। ফলে এটা জাতীয় পার্টির প্রাপ্য। কিন্তু বিএনপির অবস্থান ওই আসনে খুব বেশি শক্ত নয় বলে মহাজোটগতভাবে ভোট করার আগ্রহ নেই।
নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম জানালেন, মহাজোটের রাজনীতিতে এর আগে ছাড় দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এবার তা আর হচ্ছে না। ইতিমধ্যে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ঝিমিয়ে থাকা কর্মীরা গণসংযোগে নেমেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলছে, জাপাকে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না। আবার এই আসনটি পেলে এই অঞ্চলে লীগের রাজনীতির গতি ত্বরান্বিত হবে।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর আসনটি ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সাদ এরশাদের পক্ষে এখনো গণসংযোগ শুরু না হলেও এই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগের উচ্চমহলে দেনদরবার অব্যাহত রেখেছেন, যাতে আসনটি তাঁদের ছাড় দেওয়া হয়। নানাভাবে রংপুরে প্রচারণাও করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করবে।
জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যেহেতু এই আসনটিতে মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত দলীয় চেয়ারম্যান এরশাদ ছিলেন, সে কারণে আমরা দাবি জানিয়েছি এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না দেওয়ার জন্য।’
>রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন ৫ অক্টোবর
গত নির্বাচনে এরশাদকে ছাড় দেয় আ. লীগ
এবারও ছাড় আশা করছে জাপা
নৌকার প্রার্থী রাখতে মাঠে কর্মসূচি
এদিকে সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ক্ষুব্ধ। এই অংশটি নির্বাচনে নীরব থাকবে বলে দলটির মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীরা বলছেন।
সাদ এরশাদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া মহানগর জাপার সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মেস্তাফিজার রহমান আগের অবস্থানেই অটল আছেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রার্থী এস এম ইয়াসিরকে দলের মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনিও দলের কার্যক্রম থেকে দূরে সরে গেছেন।
নৌকার প্রার্থী রাখতে কর্মসূচি
মহাজোটের স্বার্থে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হতে পারে—এমন আশঙ্কায় নিজেদের প্রার্থী বহাল রাখতে তৎপর রংপুরের আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার চার স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও সাহিত্য সংগঠনের ব্যানারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এসব কর্মসূচি পালন করে।
বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে রংপুরের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। একই দাবিতে নগরের পার্ক মোড়, দমদমা ও পাগলাপীর এলাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।