‘শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনের আশায় পার্বত্যবাসী চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। ২২ বছর অপেক্ষা করেও পার্বত্যবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো না। সেটি আজ সুদূর পরাহত।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২ বছর পূর্তি উপলক্ষে এমন হতাশার কথাই বললেন এ চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে চুক্তির বার্ষিকী উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেএসএস। সেখানেই এসব কথা বলেন সন্তু লারমা।
দুই দশকের বেশি সময়ের সশস্ত্র লড়াইয়ের পর জেএসএস বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর। চুক্তিতে ৭২টি ধারা ছিল। এ চুক্তির মাধ্যমেই পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য তিন জেলায় তিনটি জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। সন্তু লারমা এখন আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান।
সন্তু লারমা চুক্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকার ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে অব্যাহতভাবে অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো চুক্তির মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে দিয়েছে।’
সন্তু লারমা বলেন, ‘এক নাগাড়ে ১১ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।’
সরকারে বিরুদ্ধে নানারকম অবিচার ও জুলুমের অভিযোগ তোলেন জেএসএস সভাপতি। জেএসএসের নেতা-কর্মীদের ওপর একের পর মিথ্যা মামলা দেওয়ারও অভিযোগ করেন সন্তু লারমা। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শাসন চলছে। এসব জুলুম সম্পর্কে গণতান্ত্রিক সমাজকে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না।
জেএসএস সভাপতি আরও বলেন, ‘জনসংহতি সমিতির তথা জুম্ম জনগণের পিঠ সম্পূর্ণভাবে দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের আর পেছনে যাওয়ার পথ নেই। পাহাড়িরা ২২ বছর ধরে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করেছে। তারা সরকার তথা শাসকগোষ্ঠীকে অনেক সময় দিয়েছে।’
এই নেতা বলেন, ‘জুম্ম জনগণ সকল ক্ষেত্রে দুর্বলতর ও পশ্চাৎপদ। তাই বলে তারা অবহেলা ও উপেক্ষার পাত্র হতে পারে না। জুম্ম জনগণ অধিকারকামী। এটাই তাদের একমাত্র সম্বল।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ২২ বছর ধরে চুক্তির পর তা বাস্তবায়ন না করে রাষ্ট্র অনুদার চরিত্র প্রকাশ করছে। রাষ্ট্রকে উদার হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, রাজনৈতিকভাবে পার্বত্য সমস্যার সমাধান করতে হবে। এর সঠিক বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার পরিচয় দেওয়া উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। সঞ্চালনায় ছিলেন, জেএসএসের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক উ উইন মং।