>• বিপুল জনপ্রিয়তা মাশরাফিকে তুলে দিয়েছে রাজনীতির মঞ্চে
• নড়াইল-২ আসনে মাশরাফির পক্ষে মনোনয়ন ফরম নেওয়া হবে
• মাশরাফি সম্প্রতি গড়ে তুলেছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’
• মাশরাফির স্বপ্ন—পুরো নড়াইলকে বদলে দেবে এই ফাউন্ডেশন
বর্তমান সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির। এর বাইরে আওয়ামী লীগেরই আছেন আট নেতা। তবে সব ছাপিয়ে ভেসে উঠেছে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার নাম। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, নড়াইল-২ আসনের জন্য আজ মাশরাফির পক্ষে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হবে।
খেলোয়াড়ি জীবনের সাফল্য, নেতৃত্ব গুণ ও ব্যক্তিমানুষ হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের নামটি তুলে দিয়েছে রাজনীতির মঞ্চে। তাঁর প্রার্থী হওয়ার আলোচনাটা মূলত শুরু পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বক্তব্য থেকে। গত ২৯ মে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মাশরাফির নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাশরাফির বাড়ি নড়াইল শহরে। তিনি দর্শনশাস্ত্রে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ততার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক তাঁর। গত ১৭ বছরে অমিত প্রতিভা, বুদ্ধি, অদম্য সাহস আর সাফল্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে। দেশের সবচেয়ে সফল এই অধিনায়কের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো উঠেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। দুবার খেলেছে এশিয়া কাপের ফাইনাল। শুধু সফল অধিনায়কই নন, ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও (২৫০) তিনি।
‘নড়াইল এক্সপ্রেস’খ্যাত মাশরাফির নড়াইলে বেশির ভাগ সময় কাটে সেসব বন্ধুর সঙ্গে, যাঁরা সমাজে সুবিধাবঞ্চিত। এলাকার উন্নয়নে সম্প্রতি গড়ে তুলেছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’। এই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তিনি নিজেই। কোষাধ্যক্ষ নড়াইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মির্জা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নড়াইলে দলমত-নির্বিশেষে মাশরাফি সব মহলে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। আমাদের বিশ্বাস, তিনি নির্বাচন করলে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না। মাশরাফির স্বপ্ন, পুরো নড়াইলকে একদিন বদলে দেবে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন।’
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আলোচনায় আসার পর থেকে মাশরাফি অনেকটা নীরব আছেন। ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রায়ই ক্রিকেট কিংবা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বললেও রাজনীতি নিয়ে তেমন আলোচনা করেন না। তবে মাশরাফির বাবা গোলাম মুর্তজা প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলবেন, তাঁর বাইরে যাবে না মাশরাফি। এ রকম দায়িত্ব যদি তাঁর ওপর আসে, মাশরাফি তা ভালোভাবে বিবেচনা করবে।’
এ আসনে বর্তমান সাংসদ মহাজোটের শেখ হাফিজুর রহমান। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি জয়ী হন। তিনি নড়াইলের সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তি বলে দাবি করেন।
আ.লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি
এখানে মনোনয়ন পেতে চান আওয়ামী লীগের অন্তত আটজন। তাঁদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন খান উল্লেখযোগ্য। এই দুই নেতা দীর্ঘদিন এলাকায় গণসংযোগ করে আসছেন। এ ছাড়া প্রচারণায় আছেন সাবেক সাংসদ এস কে আবু বাকের, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আইয়ুব আলী ও আসিফুর রহমান, ঢাকায় নড়াইল সমিতির সাধারণ সম্পাদক কর্নেল (অব.) সৈয়দ হাসান ইকবাল, শিল্পপতি আমিনুর রহমান, ব্যবসায়ী বাসুদেব ব্যানার্জি।
যতজনই মনোনয়ন চান না কেন, মাশরাফি প্রার্থী হলে সবাই তাঁর পক্ষে কাজ করবেন। সুবাস চন্দ্র বোস গতকাল বলেন, ‘আমি মনোনয়ন ফরম কিনব। তবে দল যাকে প্রার্থী করবে, তাঁর পক্ষে কাজ করব।’
এর আগে ১৩ অক্টোবর অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় বলা হয়, আওয়ামী লীগ করেন না, এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। এ আহ্বান প্রস্তাব আকারে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মাশরাফি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। কিন্তু এলাকায় তিনি খুবই জনপ্রিয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মনোনয়ন দিলে কী করবেন? জবাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন খান বলেন, দলীয় প্রধান যাকে নৌকা প্রতীক দেবেন, তাঁর পেছনেই নড়াইলের মানুষ কাজ করবে। এখানে কোনো মতানৈক্য বা দ্বিধা থাকবে না।
বিএনপি
গত পাঁচ বছরে বিএনপির কোনো নেতা এ আসনে গণসংযোগে নেই। গ্রেপ্তার-আতঙ্কে সবাই ‘নিজে বাঁচো’ নীতিতে চলেছেন। তবে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন শিকদার এবং সাবেক পৌর মেয়র মো. জুলফিকার আলী বিএনপির প্রার্থী হতে চান।
মাশরাফি প্রার্থী হলে বিএনপি তা কীভাবে নেবে? জবাবে উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার ছেলে এবং সফল ক্রিকেটার হিসেবে মাশরাফিকে সবাই আমরা পছন্দ করি। তবে আওয়ামী লীগ যদি তাঁকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়, তাহলে নৌকার প্রার্থী হিসেবে আমরা তাঁকে বিবেচনা করব, মাশরাফি হিসেবে নয়।’
লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং নড়াইল সদরের ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে নড়াইল-২ আসন গঠিত। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৭২ হাজার ১৫৮।