‘আমি মন্ত্রী না হওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার কারণ নেই। একাধারে ১০ বছর মন্ত্রী ছিলাম। এখন নতুনদের স্থান দিতে সরে যেতে হয়েছে। ভবিষ্যতে এই এলাকা থেকে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলুন। আমার মতো তাঁরাও একদিন মন্ত্রী হবেন।’
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর প্রথম সিলেটে নিজের নির্বাচনী এলাকায় ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা বলেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিলেট-৫ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনের সাংসদ। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি এই আসন থেকে চতুর্থবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর নাহিদ প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে মন্ত্রী হন। তবে এবারের মন্ত্রিসভা থেকে তিনি বাদ পড়েছেন।
নির্বাচনের পর গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো এলাকায় ফেরেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় নেতা-কর্মীদের ব্যথিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাবনায় এখন শুধু বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত রাজনীতিতে মনোনিবেশ থাকবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে নুরুল ইসলাম নাহিদ সিলেটে ফিরলে এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানসহ নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা অভ্যর্থনা জানান। ওই দিনই সিলেটের বিয়ানীবাজার নিজ বাড়িতে ফেরেন। পরদিন বুধবার বিয়ানীবাজারের একটি কমিউনিটি সেন্টারে কর্মিসভা করেন। গতকাল দুপুরে তাঁর নির্বাচনী এলাকার আরও একটি উপজেলা গোলাপগঞ্জে কর্মিসভা করেন।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা অডিটরিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত কর্মিসভায় নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশের সার্বিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপামর জনতা দলটিকে একচেটিয়াভাবে গ্রহণ করেছে। এ বিজয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।
এবার মন্ত্রী না হওয়া প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, ‘মন্ত্রী না হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। আমি বিগত ১০ বছর শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন প্রতিবেশী দেশ ভারতে ছয়বার শিক্ষামন্ত্রী রদবদল করা হয়। কিন্তু আমি টানা ১০ বছর শিক্ষামন্ত্রী ছিলাম। এতেই আপনাদের সন্তুষ্ট থাকা দরকার। আমি মন্ত্রী থাকাকালীন গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু তখন সারা দেশের কথা আমাকে ভাবতে হতো। এখন শুধু গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারবাসীর জন্য কাজ করে যেতে চাই।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার বিষয়ে নাহিদ বলেন, বিগত সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখন তার থেকেও অধিক উন্নয়ন হবে। জাতীয় থেকে স্থানীয় সব নির্বাচনে উন্নয়ন প্রচারণায় রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদের সঞ্চালনায় কর্মিসভায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ, দপ্তর সম্পাদক আকবর আলী, সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজিরা বেগম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সালমান আহমদ চৌধুরী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শফিকুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ওয়েছুর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও গোলাপগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর রুহিন আহমদ খান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খায়রুল হক, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমদসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা বক্তব্য দেন।