বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় ঢিল ও ডিম ছুড়েছেন ঢাকা–১৮ আসনের উপনির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদের সমর্থকেরা। আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে উত্তরায় ফখরুলের ভাড়া বাসায় এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২৫-৩০ জন বিএনপির মহাসচিবের বাসার সামনে গিয়ে স্লোগান দেন। তাঁরা কফিল উদ্দিনকে মনোনয়ন না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কয়েকজনকে বাসার বারান্দায় ঢিল ও ডিম ছুড়ে মারতে দেখা যায়। তখন মির্জা ফখরুল বাসায় ছিলেন।
তবে মনোনয়নবঞ্চিত ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। গত রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর গুলশানে যাঁরা মার খেয়েছিলেন, তাঁরা বিচার না পেয়ে ওই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ঢাকার দুটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে গত ১২ সেপ্টেম্বর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেদিন কার্যালয়ের সামনে মারামারি হয়। প্রথমে ঢাকা-৫ আসনের নবীউল্লাহ নবী ও সালাহউদ্দিন আহম্মেদের সমর্থকদের এক দফা সংঘর্ষ হয়। এর পর ঢাকা-১৮ আসনে কফিল উদ্দিন আহম্মেদ ও এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে ৭ থেকে ৮ জন আহত হন। কফিল তাঁর সমর্থকদের মারধরের বিচার চেয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কফিল উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি যারা ১২ তারিখে মাইর খাইছিল, তারাই গেছে। ১৭-১৮ জন মাইর খাইছিল, তারা বিচার-সালিস পায় নাই। তাদের মনে অনেক কষ্ট। এরা স্থানীয় মানুষ, কেউ ফকিরের বাচ্চা না। মহাসচিবও উত্তরায় থাকেন। কিন্তু তিনি গার্ডিয়ানের (অভিভাবকের) দায়িত্ব পালন করেননি।’
ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবদলের সভাপতি।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ঘটনাস্থলের অদূরেই ছিলেন উত্তরখান থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কফিল গ্রুপের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। আমরা ৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থান করছিলাম। তখন শুনলাম সাদির (মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বাহাউদ্দিন সাদি) সমর্থকেরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। এরপর আমরা যাইনি।’
অবশ্য বাহাউদ্দিন সাদি এমন তথ্য নাকচ করে দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (নূর মোহাম্মদ) কেন আমার কথা বললেন জানি না। এমন কিছু হলে আমি নিজেই সামনে দাঁড়াতাম।’
১২ সেপ্টেম্বরের মারামারির ঘটনা তদন্ত করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। গত বৃহস্পতিবার তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্তে তিনি দুই প্রার্থীর প্রত্যক্ষ দোষ পাননি।
সরকারের এজেন্টরা হামলা চালিয়েছে: স্থায়ী কমিটি
এদিকে বিএনপি মহাসচিবের বাসায় সংঘটিত ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ’ জানিয়েছে দলের স্থায়ী কমিটি। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলা হয়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের উত্তরার বাসভবনে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল বহিরাগত ব্যক্তি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বাসার ক্ষতিসাধন করে।
স্থায়ী কমিটি মনে করে, এই ঘটনার পেছনে সরকারি মদদ রয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে গুম, খুন, নারী ও শিশু নির্যাতনের যে মহামারি চলছে, তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতেই সরকারের এজেন্টরা এ হামলা চালিয়েছে।