সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের শপথ। এই কমিশনের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের ১৩তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে শপথ নিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাঁর সঙ্গে আরও চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নিয়েছেন। শপথ নেওয়ার পর নতুন সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি নির্বাচনই একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কোনো চ্যালেঞ্জকে ভয় পেলে হবে না।
গতকাল রোববার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নতুন সিইসি ও চার কমিশনারকে শপথ পড়ান। প্রথমে শপথ নেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর যথাক্রমে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা, আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমানকে শপথ পাঠ করানো হয়। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবর। এর আগে গত শনিবার নির্বাচন কমিশনে তাঁদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এই শপথের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যাত্রা শুরু হলো। তাঁদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। এই ইসির অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নতুন নির্বাচন কমিশনকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আমলানির্ভর নির্বাচন কমিশন বলে উল্লেখ করেছে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টি। গতকাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে করে জাপা বলেছে, এই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে কি না যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাদের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে তারা কতটা নিরপেক্ষ।
নতুন ইসি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি আবারও বলেছে, নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘মাথাব্যথা একটা বিষয় নিয়েই যে নির্বাচনকালীন সরকারে কারা থাকবে।’
এদিকে গতকাল এক বিবৃতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে, এটাই জনগণের প্রত্যাশা। দেশের মানুষ যাতে ভোটের মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে, সে বিষয়টি তারা (ইসি) সুনিশ্চিত করবে।
আগামী যে নির্বাচন, তাতে সর্বোচ্চ যেটা দেওয়া সম্ভব, তা দেওয়ার চেষ্টা করব।কাজী হাবিবুল আউয়াল, সিইসি, শপথ নেওয়ার পর
শপথ গ্রহণের পর নতুন নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশন করে না। নির্বাচন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর সঙ্গে অনেকেই যুক্ত। তাঁদের (তিনি এবং চার কমিশনার) প্রধান দায়িত্ব হবে সহযোগিতাগুলো আদায় করে নেওয়া।
সিইসি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আশাবাদী, যেসব সহকর্মী পেয়েছি, তাঁদের ওপর আস্থা আছে, আগামী যে নির্বাচন, তাতে সর্বোচ্চ যেটা দেওয়া সম্ভব, তা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে সিইসি যখন কথা বলছিলেন, তখন অন্য চার কমিশনার তাঁর পাশে ছিলেন।
সাংবাদিকেরা সিইসির জানতে চেয়েছিলেন, এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ কী মনে করছেন? এর জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি নির্বাচনই একটা চ্যালেঞ্জ। মানুষের জীবনটাও চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কোনো চ্যালেঞ্জ ভয় পেলে হবে না। চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হবে। তবে চ্যালেঞ্জে কী, সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারেননি। দায়িত্ব নিলে চারদিকে তাকিয়ে বোঝা যাবে আসলে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না। তখন সেই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে এবং লক্ষ্য অর্জনে দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপদ্ধতি গড়ে তোলা এবং কৌশল নিরূপণ করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আস্থা কমে গেছে, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে চান না, ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কী করবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, শনিবার বেশ কিছু বক্তব্য দিয়েছেন (সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা কামনা), এ নিয়ে নতুন করে কোনো বক্তব্য নেই।
এদিকে নতুন সিইসি এবং অপর চার নির্বাচন কমিশনার আজ সোমবার বেলা ১১টা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বৈঠকে অংশ নেবেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ) আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, আজ বিকেল চারটায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন সিইসি এবং চার কমিশনার।