অস্ত্রধারী আরেকজনের স্বীকারোক্তি

ভোটকেন্দ্র দখলে রাখতে একেকজন দুই–তিনটি গুলি করেছিলেন

সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউপি নির্বাচনের দিন দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে
ফাইল ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ১৫ মাস আগে চন্দনাইশ পৌর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলে ভাড়ায় খাটার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন অস্ত্রধারীদের আরেকজন। শওকত হোসেন (৩২) নামের এ অস্ত্রধারী চক্রটির নেতা।

চন্দনাইশে পৌর নির্বাচনের দিন এই চক্রের সদস্যরা একেকজন দুই থেকে তিনটি করে গুলি করেছিলেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন, আহত ব্যক্তিদের অনেকের মধ্যে একজন কলেজছাত্র মারা গিয়েছিলেন।

আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম নাজমুন নাহারের আদালতে অস্ত্রধারী শওকত হোসেন জবানবন্দিতে এ তথ্য দেন।

গত বুধবার রাতে শওকতসহ তিন অস্ত্রধারীকে নগরের লালদীঘি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বাকি দুজন হলেন কামরুল আজাদ ওরফে সুমন (৩২) ও আজাহার উদ্দিন (৩২)।

গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে কামরুল গত বৃহস্পতিবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায় নির্বাচনে কেন্দ্র দখলে ভাড়ায় খাটার বিস্তারিত বর্ণনা দেন তিনি। আর আজাহারকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আগামীকাল রোববার তাঁকে আদালতে হাজির করা হতে পারে। তবে ভোটের দিন প্রদর্শন করা এই তিনজনের অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা পরিদর্শক মো. নেজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ভাড়ায় খাটা চক্রের দলনেতা শওকত জবানবন্দিতে ১৫ মাস আগে চন্দনাইশে পৌর নির্বাচনে এক কলেজছাত্রকে গুলি করে মারার কথা স্বীকার করেছেন। সেদিন শওকত নিজেই দুটি গুলি করেছিলেন হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে। সঙ্গে ছিলেন কামরুল, আজাহার, মো. মোরশেদসহ সাত-আটজন। তাঁরা সেদিন একসঙ্গে গুলি চালিয়েছিলেন। তখন ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসা লোকজন পালিয়ে যান। এরপর এ অস্ত্রধারীরা চলে আসেন।

জবানবন্দিতে শওকত উল্লেখ করেন, ভোটের আগের দিন রাতে চন্দনাইশ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রহিম উদ্দিনের ঘরে যান এই অস্ত্রধারীরা। অস্ত্র ছাড়াও রাতে হাতখরচের জন্য ৫ হাজার টাকা করে নেন। ভোটের দিন নেন ১০ হাজার টাকা করে হাতখরচ। আসার সময় চা-পানি খাওয়ার জন্য আরও ৩ হাজার টাকা। তবে সর্বমোট কত টাকা নিয়েছেন, সেই বিষয়ে জবানবন্দিতে কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।

২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে দুপুরে আবদুর রহিম (স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা) ও মো. সেলিম (আওয়ামী লীগের সমর্থক) নামের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের একপর্যায়ে গোলাগুলি হয়। কেন্দ্রের পাশেই ছিলেন গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হাবিবুর ইসলাম। গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে পরে মারা যান। এ ঘটনায় তাঁর মা ছকিনা খাতুন চন্দনাইশ থানায় মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্তে পিবিআইতে পাঠানো হয়।

শওকত তাঁর জবানবন্দিতে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুর রহিম তাঁকে টাকার বিনিময়ে নিয়ে যান বলে উল্লেখ করলেও তা অস্বীকার করেন তিনি। আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে ভোটের সময় আনি নাই।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা উপপরিদর্শক (এসআই) শফিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, শওকতের জবানবন্দিতে নির্বাচনে ভাড়ায় খাটা চক্রের আরও কয়েকজন সদস্যের নাম বেরিয়ে এসেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।