‘দর-কষাকষি’র সক্ষমতা নেই বলেই সরকার ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান আনতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীতে এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলতে তো কখনো বলি না, ভারতের সঙ্গে আমাদের তো বিরোধ নেই। সমস্যাটা হচ্ছে, আজকে এমন একটা সরকার, যে আমার সমস্যাগুলো নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলতে পারে না। সেই শক্তি এবং বার্গেনিং ক্যাপাবিলিটি (দর-কষাকষির সক্ষমতা) তার নেই। কারণ, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সে তাদের ওপর নির্ভর করে—এটা হচ্ছে মূল কথা, এটা বাস্তবতা। এ বিষয়গুলো যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে সরকার যত দিন থাকবে, ততই বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে, একে একে নষ্ট হবে এবং বাংলাদেশ নিঃস্ব হয়ে যাবে।’
হোটেল পূর্বাণীতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (অ্যাব) উদ্যোগে ‘জলসা ঘর’ মিলনায়তনে ‘ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার চুক্তি: বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিপর্যয়’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। এতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন তথ্যচিত্রের মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অমীমাংসিত সমস্যাগুলো তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ফেনী নদীর পানি—এটা বাংলাদেশের নদী, এটা অভিন্ন নদী নয়। সেই ফেনী নদীর পানি নিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, খাওয়ার পানি চাইলে পানি দেব না? ভালো কথা, পানি দেবেন। তা আমার যে লক্ষ লক্ষ মানুষ তিস্তার অববাহিকায়, তারা যে আজকে পুরোপুরিভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, জীবন-জীবিকা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) একটি কথাও বলবেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিস্তার পানি দিচ্ছে না। অন্যান্য নদীর পানির কোনো হিস্যা হচ্ছে না। আমি পানি পাব না কেন? সীমান্তে আমার লোকদের গুলি করে মেরে ফেলে দিচ্ছে, আপনারা বলছেন যে এটা কমে এসেছে। আমরা তো কমতে দেখছি না।’
বর্তমান সরকার সংসদে কোনো চুক্তিই উপস্থাপন করছে না—এ অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘এটা এমন একটা সংসদ যে চুক্তিগুলো নিয়েও একটা আলোচনা হয়নি। আমাদের সংবিধানে বলা আছে, যেকোনো চুক্তি সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। সেখানে আলোচনা করতে হবে এবং সেটাকে রেটিফাই করতে হবে সংসদে। সেটা কখনোই করা হয় না।’
‘বিদেশে কর্মরত নারী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে সৌদি আরব থেকে আমাদের নারী শ্রমিকেরা যাঁরা ফিরে আসছেন, তার মধ্যে ৫৩ জন নিহত হয়েছেন, অনেকে ফিরে এসেছেন। সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে যে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, সংখ্যা কম। তার আগেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে উনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন যে আমাদের সম্পর্ক এমন সুন্দর জায়গায় গেছে, আমি সেটা বলতে চাই না।’
অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জি কে মোস্তাফিজুর রহমান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, এগ্রিচালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, অ্যাবের আবদুস সালাম, আশরাফ উদ্দিন, গোলাম মাওলা, এ কে এম জহিরুল ইসলাম ও সাহাদাত হোসেন বক্তব্য দেন। সেমিনারে অ্যাবের সাধারণ সম্পাদক হাছিন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ প্রকৌশলী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
‘অর্থনীতি ফোকলা হয়ে গেছে’
আজকের অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা একদম ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। খুব বড়াই করে তারা (সরকার) বলছে যে বাংলাদেশ রোল মডেল, সেই রোল মডেল এমন একটা হয়েছে যে শুধু ঋণের ওপরে তাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলো ফোকলা হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো থেকে এমনভাবে ঋণ নিয়েছে যে কীভাবে শোধ করবে, এটা আমরা জানি না। অর্থনীতিবিদেরা অনেকে বলেই ফেলছেন, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কিন্তু খারাপ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের পত্রিকায় দেখবেন, গার্মেন্টসের রপ্তানি বহু কমে গেছে। বহু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম এগিয়ে যাচ্ছে। ম্যানুফ্যাকচারড ইন্ডাস্ট্রিজ আজকে বাংলাদেশে হচ্ছে না। কৃষকেরা ধানের দাম পান না, ধান চাষ বাদই দিয়ে দিয়েছেন প্রায়। তাহলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থাকবে কী করে?’ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এই সরকারকে সরাতে হবে। তাদের সরাতে হলে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। সমস্ত দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে এক করে এই যে দানবের মতো বসে আমাদের সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে, তাকে সরাতে হবে। সে জন্যই আমরা বলেছি, এ নির্বাচন করেছে তারা ডাকাতির নির্বাচন, এ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে দিয়ে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি নতুন নির্বাচন হবে, জনগণের সরকার হবে, জনগণের পার্লামেন্ট হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার—যিনি গণতন্ত্রের প্রতীক—মুক্তি এবং অবিলম্বে নতুন নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করছি।’