যদি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি পর এখন পর্যন্ত ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওই মন্তব্য করেন সরকার দলীয় এই সাংসদ।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ইতিমধ্যে ৫৬ মামলাটি মামলা হয়েছে। আবদুল হাই বাচ্চু ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুদক তাঁকে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
গতকাল রোববার সাভারে ট্যানারি পল্লীতে শ্রমিকদের নিয়ে এক সভায় শেখ ফজলে নূর তাপস বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু, বাচ্চুর বিষয়ে দুদকের ভূমিকা ও দুদক চেয়ারম্যানের সমালোচনা করেন। এই বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আজ আদালত প্রাঙ্গণে শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে সাংবাদিকেরা কথা বলেন।
বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে কি বলবার চেষ্টা করেছেন—এমন প্রশ্নে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাতেও দেখেছি, তদন্তপূর্বক দেখেছি যে বেসিক ব্যাংকের মাধ্যমে ফিনান্সিয়াল সেক্টরে, ব্যাংকিং সেক্টরে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটার মুল ব্যক্তি হলেন তৎকালীন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। যার কারণে সরকার তাকে সেই ব্যংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করেছে। কিন্তু আজ অবধি বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত যতগুলো দুর্নীতির মামলা হয়েছে, আমরা লক্ষ্য করেছি, শুধু কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদেরকে সেই মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তৎকালীন যে চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু তার বিরুদ্ধে আজ অবধি কোনো দুর্নীতির মামলা আনা হয়নি। যদিও তার স্বেচ্ছাচারিতা এবং একক সিদ্ধান্ত বিভিন্নভাবে ঋণগুলোর ব্যাপারে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। সেটা আমাদের স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন সভাতে তদন্তের মাধ্যমে সেগুলো প্রতীয়মান হয়েছে।
শেখ ফজলে নূর তাপস আরও বলেন, সেই প্রেক্ষিতে আমরা লক্ষ্য করেছি কয়েকদফা শুধু তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়েছে। আজ অবধি কোনো মামলা করা হয়নি। তাই আমরা মনে করি, জাতি মনে করে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করেছেন, শুদ্ধি অভিযান আরম্ভ করেছেন, সে প্রেক্ষিতে দুদকের এ বিষয়ে জবাবদিহিতা আবশ্যকীয়, কেন এখন পর্যন্ত তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর ব্যাপারে কোনো মামলা করা হয়নি এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা জাতি জানতে চায়।
এ বিষয়ে দুদকের ব্যর্থতা বা দুদকের চেয়ারম্যানের ব্যর্থতা বলতে চান—এমন প্রশ্নে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, অবশ্যই, আমি এ কারণে গতকাল রোববার (একটি সভায়) বলেছি দুদক চেয়ারম্যান যদি বলে থাকেন বা বলতে চান বা মনে করেন যে, তিনি কোনো প্রভাবের কারণে এ ব্যবস্থা নেননি তাহলে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। সে কারণে তার অবশ্যই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত, তিনি যদি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন। আর যদি উনি মনে করেন যে, না তিনি কোনো প্রভাব দ্বারা বা কারো কথায় কোনো প্রভাবিত হবেন না তাহলে অবশ্যই আমরা মনে করি, জাতি মনে করে, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে গ্রেপ্তার করেন, জিজ্ঞাসাবাদ করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আশু পদক্ষেপ নেবে।
অপর প্রশ্নে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সেটিই জাতির প্রশ্ন, আমাদের প্রশ্ন কেন তার বিরুদ্ধে দুদক এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যেখানে সর্বোচ্চ আদালত থেকেও এ ব্যপারে পর্যবেক্ষন ছিল বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায়। তারপরেও আজ পর্যন্ত আমরা দেখছি, তাকে একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি পায়তারা হচ্ছে, তাকে বাচিয়ে রাখার বা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার। এজন্যই আমি মনে করেছি, এটা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য একজন নাগরিক হিসেবে, সুনাগরিক হিসেবে, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে তার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য এবং সর্বোপরি এই দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য ওই কথাগুলো বলেছেন বলে জানান শেখ ফজলে নূর তাপস।
কারা ষড়যন্ত্র করছে, প্রভাব বিস্তার করছে-অপর প্রশ্নে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এটি দুদক জবাব দিক, দুদকের চেয়ারম্যান জবাব দিক, দুদকের অন্যান্য কমিশনাররা আছেন, তারা জবাবদিহি করুক।
ছাত্র রাজনীতি ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন:
ছাত্র রাজনীতি নিয়ে করা এক প্রশ্নে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি আমাদের যে ছাত্র রাজনীতি রয়েছে অথবা আমাদের সাংগঠনিক যে রাজনীতির প্রচলন রয়েছে এই উপমহাদেশে এটি ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন রয়েছে।
সাংসদ তাপসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যান (দুদক) একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থার চেয়ারম্যান। উনার চেয়ারম্যানশিপ নির্ধারণ করা হয় বাছাই কমিটির মাধ্যমে। সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে বাছাই কমিটি হয়ে থাকে। এটি চেয়ারম্যানের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, উনি পদত্যাগ করবেন কি না-সেটি তো আমি জানি না।
সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্য এপ্রিশিয়েট করছি জানিয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন, কারণ উনি চাচ্ছেন, বেসিক ব্যাংকের মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হোক। একজন সাংসদ হিসেবে বা একজন নাগরিক হিসেবে একজন সচেতন আইনজীবী হিসেবে উনি চাইতে পরেন—এটি এপ্রিশিয়েট করি। তিনি বলেন, ‘কদিন আগে চেয়ারম্যান সাহেব বলেছিলেন এখানে ৪ হাজার কোটি টাকার বিষয়। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি অনেক টাকা উদ্ধার হওয়ার পথে। বেসিক ব্যাংকের অনেকগুলো মামলা আছে। অর্থ পাচার মামলার প্রধান বিষয় টাকার উৎস। টাকাটা কোথায় গেলো সে ব্যাপারটা আইডেন্টিফিকেশন পর্যায়ে আছে। বাকি সব কাজ শেষ। এখন টাকার যদি গন্তব্য বের করা না যায়, তাহলে তো অভিযোগপত্র দেওয়া হলে তা আদালতে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
আদালত প্রাঙ্গণে খুরশীদ আলম খান আরও বলেন, ‘তার মানে এই না যে অনন্ত কাল পর্যন্ত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে না। আমি যতটুকু সর্বশেষ অবস্থা জানি টাকার গন্তব্য ফাইন্ডআউট হয়ে গেলই প্রতিবেদনটা হয়ে যাবে। সুনির্দিষ্ট টাইম বলা ডিফিক্যাল্ট। বেসিক ব্যাংক নিয়ে ইতিমধ্যে ৫৬টি মামলা, আরও ছয়টি মামলা হওয়ার পথে।’
অভিযোগপত্রে আবদুল হাই বাচ্চুর নাম থাকার সম্ভবনা আছে কি না—এমন প্রশ্নে খুরশীদ আলম খান বলেন, মনে করি উনার সংযুক্তি থাকলে অব্যশই হওয়া উচিত। যদি ক্রেডিবল অ্যাভিডেন্স থাকে, তাহলে অবশ্যই তার নাম আসবে।