বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সমস্যা আজকে জাতির, সমস্যা বিএনপির নয়। আজকে দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সব অধিকার চলে যাচ্ছে, গণতন্ত্র চলে যাচ্ছে। সবাই বলছে বিএনপির সমস্যা। বিএনপির কোনো সমস্যা নেই, বিএনপি ইজ ইউনাইটেড।
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সহিংসতা ও নারী: বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মরার আগে আমাদের মরে যাওয়া ঠিক নয়। কেন আমরা মরে যাওয়ার আগে মরে যাচ্ছি? কেন আমরা ভয়ে ভীত হয়ে, শঙ্কিত হয়ে ঘরে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করছি? ভয়ে লুকিয়ে থাকলে আমরা বাঁচব না। অনেকে মনে করেন, এখন বিএনপি–ঐক্যফ্রন্টকে ধরছে, আমরা বেঁচে যাব। বাঁচবেন না, এবার তো কেউ বাঁচল না।’
সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে একটি দলের শাসন চলছে। তারা ছলে–বলে–কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার উপক্রম করেছে। গত নির্বাচনে দেখলাম অত্যন্ত সচেতনভাবে তাদের ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে। এর চেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার আর কিছু হতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, আজকে সংসদ চলছে, এই সংসদ কার কথা বলবে? এই সংসদ কি নারীদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, সে বিষয়ে কথা বলবে? বলবে না। কারণ হচ্ছে তাদের লোকেরাই এই কাজগুলো করছে। তাদের এই সংসদ বসানোর নৈতিক কোনো বৈধতা নেই। কারণ, তারা নির্বাচিত নয়। নির্বাচনের নামে গোটা জাতির সঙ্গে প্রতি একটি নিষ্ঠুর প্রহসন হয়েছে।
বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে পত্রপত্রিকা, টেলিভিশনের টক শোগুলোয় তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা বিএনপি আর ঐক্যফ্রন্টের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ান। আওয়ামী লীগ যে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিল, সংবিধানকে লঙ্ঘন করল, সে বিষয়গুলো বলার সাহস তাঁরা পান না। যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই চেতনাগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হলো, এসব নিয়ে কেউ কথা বলেন না।
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, একটি দেশে যখন ফ্যাসিবাদ চলে, তার সর্বপ্রথম কাজটা কী থাকে? একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা, ত্রাস সৃষ্টি করা। সব জনগণের মধ্যে একটি ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া। এই ভীতিতে বাস-রেস্টুরেন্টে কেউ কথা বলতে চান না। তাদের সফলতা এই জায়গায়। তারা একটি ভয়ভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে, এই ভয়ভীতির কারণে কেউ আর কথাই বলতে চায় না।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে ইকোনমিস্টের মতো পত্রিকা ক্যাপশন করেছে, অবিচুয়ারি টু ডেমোক্রেসি।’ তিনি আরও বলেন, গোটা পৃথিবীর গণমাধ্যম জানে যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। এই দেশের মানুষ ১৯৩৫ সাল থেকে ভোট দিয়ে আসছে। যে দল গণতন্ত্রের কথা বলেছে, সেই দল আজ আবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল, আজ আবার এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হলো।
খালেদা জিয়াকে জেলে রাখার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে খালেদা জিয়াকে একটি নির্জন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এটা তাঁর প্রাপ্য না। তিনি জামিন পেয়েছেন, কিন্তু তাঁকে জামিন দেওয়া হবে না। একটির পর একটি ‘মিথ্যা’ মামলা তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এখন পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯৮ হাজার মামলায় ২৭ লাখ আসামি করা হয়েছে। এগুলোর সব তথ্য বিএনপির কাছে আছে।
সাধারণ মানুষকে নিয়ে আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আপনারা ভয় পাবেন না। সারা দেশের মানুষ আপনাদের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। এখন সাহস নিয়ে লড়াই করতে হবে।’
নারী নির্যাতনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, যে দেশে জনগণের কোনো নিরাপত্তা নেই , যে দেশে সংবিধানসম্মত একটি নির্বাচন করতে গিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সব দখল করে নেওয়া হয়, সেখানে নারী নির্যাতনের মতো বিষয়গুলোর বিচার পাওয়া যাবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাহিদা রফিক। অনুষ্ঠানে দিলারা চৌধুরী, তাজমেরী ইসলাম, বিলকিস জাহান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।