>• নির্বাচন বিষয়ে বিএনপি দলগতভাবে ঘোষণা দেবে না
• সিদ্ধান্ত ঐক্যফ্রন্টে চূড়ান্ত হবে, জোটগতভাবে ঘোষণা
• ভোট পেছানোর দাবি তুলবে
• সরকারের সঙ্গে ফের বসতে চায় ঐক্যফ্রন্ট
• আজ বিস্তারিত জানাবেন ড. কামাল
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়েই বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে যাচ্ছে। তবে তারা ভোটের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে নির্বাচনের পুনঃ তফসিলের দাবি জানাবে।
গতকাল শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটি, ২০-দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরপর বৈঠক হয়। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়াসংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি দলগতভাবে কোনো ঘোষণা দেবে না। সব সিদ্ধান্তই ঐক্যফ্রন্টে চূড়ান্ত হবে এবং তা জোটগতভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
গত রাতে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে জানাবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।
বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে তাঁদের সাত দফা দাবির কোনোটাই মানা হয়নি। তারপরও দেশের স্থিতিশীলতা এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে তাঁরা আলোচনার দরজাও খোলা রাখবেন। পাশাপাশি তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তাঁরা নির্বাচনকেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিচ্ছেন।
অবশ্য গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের বৈঠক শেষে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে যাব কি যাব না, এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। দুদিনের মধ্যে জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।’
গতকাল বিকেলে বিএনপির গুলশানের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। প্রায় কাছাকাছি সময়ে অপর একটি কক্ষে ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলো বৈঠকে বসে। ২০ দলের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এলডিপির অলি আহমদ। জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বসেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। সেখানে দলটির নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে মত দেন বলে জানা গেছে। ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপির মির্জা ফখরুল, মওদুদ আহমদ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে কাদের সিদ্দিকী গতকাল সন্ধ্যায় বিকল্পধারার সভাপতি বি চৌধুরীর বাসায় যান। সেখান থেকে এসে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যোগ দেন।
২০ দলের মতামত
২০-দলীয় জোটের একাধিক সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে বিএনপি বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়ে শরিকদের প্রত্যেকের কাছে আলাদা মতামত চেয়েছে। এতে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট ও ডেমোক্রেটিক লীগ নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেয়। বাকিরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে মত দেয়। তবে বিজেপি এ-ও বলেছে, জোট সিদ্ধান্ত নিলে তারা সেটাই মানবে। বৈঠকে ২০ দলের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান শরিকদের মতামত লিখে নেন।
পরে জানতে চাইলে জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে সব দলের মতামত চাওয়া হয়। বেশির ভাগই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।
মনোনয়নপত্রে সই করবেন ফখরুল
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। এই অবস্থায় বিএনপির দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কে সই করবেন, তা নিয়ে দলের ভেতর আলোচনা ছিল। গতকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে সই করার এই ক্ষমতা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেওয়া হয়।
আবার সংলাপ চাইতে পারে
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্ট সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও ভোট ২৩ ডিসেম্বর থেকে পেছানোর দাবি জানাবে। এ জন্য তারা কাল সোমবার নির্বাচন কমিশনে যাবে।
পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আবারও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সংলাপ বা আলোচনার আহ্বান জানানো হতে পারে। এ জন্য ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আলাদা চিঠি দেওয়া হতে পারে। আর ভোট পেছাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজি না হলে ইসি অভিমুখে পদযাত্রাসহ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা মনে করছেন, পুনঃ তফসিল না হলে অল্প সময়ের মধ্যে ভোটের প্রস্তুতি নেওয়া কষ্টসাধ্য হবে। ইতিমধ্যে বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সাত দিন ভোট পেছানোর দাবি করেছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটও পুনঃ তফসিল চেয়েছে।
প্রতীকের বিষয়ে চিঠি দেবে শরিকেরা
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। বিএনপিকে জোটগতভাবে নির্বাচন করতে হলে শরিকদের প্রতীক বরাদ্দের জন্য আজ রোববারের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল ২০ দলের বৈঠকে নিবন্ধিত শরিক দলগুলোকে প্রতীকের বিষয়ে নিজ উদ্যোগে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিতে বলা হয়েছে। ওই চিঠির অনুলিপি আজ দুপুরের মধ্যে বিএনপির কাছে পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে সব কটি সমন্বয় করে জোটের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে।
বৈঠক শেষে জোটের শীর্ষ নেতা অলি আহমদ নিবন্ধিত দলগুলো কমিশনে চিঠি লিখবে বলে গণমাধ্যমকে জানান। তিনি বলেন, ‘চিঠির ভাষা এ রকম হবে, যদি আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, সে ক্ষেত্রে আমাদের অনেকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন। আবার অনেকে জোটগতভাবে নির্বাচন করবেন।’
ভোটে সবার প্রতীক ধানের শীষ
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে। এ ক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলের শরিকেরা বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচন করবে। তবে আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী কী করবে, তা ঠিক হয়নি। দলটির নীতিনির্ধারকদের আগের সিদ্ধান্ত ছিল স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করা।
গতকালের বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়ে কোনো মত দেননি। জানা গেছে, তিনি নির্বাচন ও প্রতীকের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত জানাতে এক দিন সময় চেয়েছেন। তাঁরা নির্বাচনে গেলে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারেন।
গতকাল ২০-দলীয় জোট, বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পৃথক বৈঠকে নির্বাচনের সবাই বলছেন, রাজনীতি ও নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক কাল
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় ঢোকার আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সর্বশেষ পরিস্থিতি আরেকবার অবহিত করা হবে। বিশেষ করে, দুই দফা সংলাপে সাত দফা দাবির ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে, তা তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। আগামীকাল সোমবার কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে।