ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

বিএনপির মূল্যায়ন, সরকার দমন–পীড়নের পথেই হাঁটবে

ছাত্রলীগের উপর্যুপরি হামলায় ছাত্রদলের এত নেতা-কর্মীর আহত হওয়ার ঘটনায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে বিএনপি। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এটা নেহাত কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার জের নয়। এর লক্ষ্যবস্তু আগামী সংসদ নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে সরকারি দল এই বার্তা দিচ্ছে যে কোনো সমঝোতা নয়, দমনপীড়নের পথেই হাঁটবে তারা।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায় থেকেও বলা হচ্ছিল, আগামী সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। এই নির্বাচনে বিএনপিকেও চাইছে সরকারি দল। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও মন্ত্রীদের কিছুটা ‘নরম সুরে’ কথা বলে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী আবহ তৈরির চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকায় ছাত্রদলের ওপর কয়েক দফা হামলা এবং বিভিন্ন জেলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সমাবেশে বাধা দিয়ে পণ্ড করে দেওয়ার ঘটনায় সে আবহ ম্লান হয়ে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে

বিএনপির নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নির্মমভাবে পিটিয়ে সরকারি দল নতুন করে বার্তা দিল যে তারা দমন-পীড়নের অবস্থান থেকে মোটেও সরেনি। এ অবস্থান বজায় রেখেই ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করাই তাদের লক্ষ্য। ফলে যারা ইতিমধ্যে সরকারের ‘নরম সুরের’ কথায় প্রভাবিত হতে যাচ্ছিল, তাদের ভুল ভাঙবে। এ ছাড়া বিএনপি সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে যে কাজ করছে, সেটায় বিঘ্ন ঘটানোও সরকারি দলের একটা লক্ষ্য।

‘বিরোধী দলকে প্রতিহত করার জন্য এটা তাদের পুরোনো পদ্ধতি, চিরাচরিত অভ্যাস। তারা মওলানা ভাসানীকে, যিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা, তাঁকেও মেরে হল থেকে বের করে দিয়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

ঢাকায় ছাত্রদলের ওপর হামলা হয় তিন দিনে, কয়েক দফায়। প্রথমে ২২ মে সন্ধ্যায়, এরপর ২৪ ও ২৬ মে। এর সূত্রপাত হয় পদ্মা সেতু ইস্যুতে খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ কটূক্তি করছেন, এ অভিযোগে।

তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, এসব হামলার পেছনে দুটি লক্ষ্য আছে। একটি হচ্ছে ছাত্রদল যাতে মাঠে নামতে না পারে, সে জন্য হামলা মামলা দিয়ে চাপে ফেলা। অন্যটি হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভয় ধরানো।

সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার পর নিজের অনুসারীদের নিয়ে সামাদ আজাদের (বাঁ থেকে তৃতীয়) মহড়া। তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী

গত ১৭ এপ্রিল কাজী রওনকুল ইসলামকে সভাপতি ও সাইফ মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। অল্প দিনের মধ্যেই ছাত্রলীগের হামলার সম্মুখীন হলো ছাত্রদল। তবে বিএনপির নেতারা মনে করেন, সমর্থনের দিক থেকে ছাত্রদলের যে সামর্থ্য আছে, তা দুই দিনের জমায়েতে তারা দেখাতে পেরেছে। এটা ক্ষমতাসীন দলের জন্য উদ্বেগের একটা কারণ। যে কারণে ছাত্রলীগ এভাবে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে এবং হামলার পক্ষে রাখঢাক না করেই কথা বলছে।

গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধনে ছাত্রদলের উদ্দেশে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যাঁরা ধৃষ্টতা দেখাবেন, তাঁদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসার কোনো দরকার নেই। ক্যাম্পাসে আসতে হলে তাঁদের ক্ষমা চাইতে হবে।

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিরোধী দলকে প্রতিহত করার জন্য এটা তাদের পুরোনো পদ্ধতি, চিরাচরিত অভ্যাস। তারা মওলানা ভাসানীকে, যিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা, তাঁকেও মেরে হল থেকে বের করে দিয়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন।’

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মনে করেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো আন্দোলনে নামার যে পরিকল্পনা করছে, তা যাতে দানা বাঁধতে না পারে, সে লক্ষ্যেই ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। সরকার বোঝাতে চাইছে যে এই দাবিতে মাঠে নেমে কাউকে সংঘবদ্ধ হতে দেওয়া হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত দুটি নির্বাচনে জনগণের ভোট চুরি করেছে। সাম্প্রতিক হামলার মধ্য দিয়ে আবারও ভোট চুরির সেই বার্তাই দিচ্ছে।’

তবে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা এখনই সরকারি দলের হামলার পাল্টা অবস্থান নিতে চাইছেন না। এখন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপিসহ সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে মাঠে নামানোর জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার যে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, সেটি দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম চলবে।