গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে হঠাৎ বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছেন জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আবদুর রশিদ সরকার। তবে বিএনপির অনেক নেতা–কর্মীই এই ঘটনায় অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ। তাই তাঁর চূড়ান্ত মনোনয়ন ঠেকাতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা–কর্মীরা।
এই বিষয়ে জাপার সাবেক নেতা বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুর রশিদ বলেন, ‘বিএনপির কাছ থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার সবুজ সংকেত পেয়েই জাপা থেকে পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি।’
রশিদ ছাড়াও গাইবান্ধা–২ আসনে বিএনপির চিঠি পেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খন্দকার আহাদ আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুন্নবী টিটুল।
আবদুর রশিদের হঠাৎ বিএনপিতে যোগদান ও দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা–সমালোচনা চলছে চায়ের স্টল থেকে শুরু করে অফিস-আদালতসহ সর্বত্র। তবে শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ কে পাবেন, তা নিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা জল্পনাকল্পনা চলছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ আসনে হঠাৎ করে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুর রশিদ সরকার তদবির করে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়েছেন। তিনি জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপি থেকে সংসদ নির্বাচন করতে চান। কিন্তু সদর আসনে পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা বাদে তাঁকে প্রার্থী করলে বিএনপির নেতারা তাঁকে কঠোরভাবে প্রতিহত করবেন। আমাদের সিদ্ধান্ত না মানলে আমরা বিএনপি থেকে গণপদত্যাগ করব।’
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, গাইবান্ধার বেশির ভাগ নেতা–কর্মী মনে করেন, যিনি উদ্বাস্তু হিসেবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন, তিনি জাতীয় পার্টির ভোটগুলো হারিয়েছেন এবং যোগ দেওয়ার পর বিএনপির দিক থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। একটি পরিকল্পনা নিয়ে তিনি এগোচ্ছেন। পরিকল্পনাটি হচ্ছে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিভ্রান্ত করা।
আবদুর রশিদ সরকার বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির হাল ধরে আছি। জাপা থেকে দুইবার সাংসদ নির্বাচিত হই। পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ গাইবান্ধার একাধিক জনসভায় একাদশ নির্বাচনে আমাকে দলীয় এবং মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। আমার হাত ধরে জনগণের সামনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই আশায় প্রচারণা চালিয়ে আসছি। এমনকি তাঁর নির্দেশে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। অথচ আমাকে দলীয় মনোনয়ন থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হয়। তাই জাপা থেকে পদত্যাগ করে বিএনপির মনোনয়ন নিয়েছি।’
বিএনপি থেকে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী আহাদ আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর সমর্থকেরা মনে করেন, পারিবারিকভাবে আহাদ আহমেদের সুখ্যাতি রয়েছে। তাঁর বাবা খন্দকার আজিজুর রহমান ১৯৭৩-৭৮ সালে গাইবান্ধা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। গাইবান্ধায় বিএনপিকে স্বচ্ছতার মধ্যে নিয়ে আসেন। আহাদ আহমেদ বলেন, ‘জেলার হেডকোয়ার্টার সদর আসন। তাই আসনটি কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ আহাদ ছাড়াও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি ছাত্রজীবনে গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন।
এ আসনে বিএনপির তিনজন ছাড়াও বিভিন্ন দলের আরও আটজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাঁরা হলেন মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম, সিপিবির মিহির ঘোষ, ইসলামী ঐক্যজোটের যোবায়ের আহম্মেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আল-মামুন, হাফিজুর রহমান (স্বতন্ত্র), ওয়াহেদ মুরাদ, জিয়া জামান খান (স্বতন্ত্র) ও রেজাউল করিম (স্বতন্ত্র)।