দেশের কোনো সমস্যার সমাধান প্রয়োজন হলে এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। এটা কোনো ভালো লক্ষণ না। এ ছাড়া দেশে কোনো প্রতিষ্ঠান দাঁড়ায়নি। যেসব প্রতিষ্ঠান কিছুটা দাঁড়িয়ে ছিল, সেগুলো এখন ধ্বংস করা হচ্ছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। একসময় ভাতের অধিকার নিয়ে কাজ করা দল এখন মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
আজ শুক্রবার মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ১৮তম সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী মিলনমেলায় আমন্ত্রিত অতিথি ও দলের নেতারা এসব কথা বলেন। ‘ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক পরিবার থেকে বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থকেন্দ্রিক বাসদ পরিবারের সদস্য হোন’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাসদ।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ডাকসুতে নির্বাচন নামের ক্যারিকেচার হয়েছে। এখন আবার প্রধানমন্ত্রী সবাইকে দেখা করতে বলেছেন। এই দেখা করার মাধ্যমে তিনি হয়তো সমাধানের একটি চেষ্টা করবেন। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপের সমান।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, সময়টি ভীষণ প্রতিকূল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ ব্যবসায়িক দেয়ালে বন্দী হয়ে ধুলায় লুটিয়ে গেছে। ভোট-ব্যবস্থা চুরমার হয়ে গেছে। শোষণ-বৈষম্যে দেশ ভরে গেছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক অস্বাভাবিক বিষয় যেগুলো আগে ভাবা যেত না, সেগুলো এখন নিয়মিত ঘটছে। তিনি বলেন, গ্যাসের অন্যায্য দাম বৃদ্ধি, ডাকসু নির্বাচনে জালিয়াতি, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে ডাকাতির মতো ঘটনা দেখা গেছে। এসব একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে চলতে পারে না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ করেছিলেন, নির্বাচনের পর সেগুলোর সত্যতা পাওয়া গেল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছা করে অভিযোগ কানে নেয়নি। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের ঘটনায় আদালতের উচিত সুয়োমোটো রুল (স্বতঃপ্রণোদিত) দেওয়া। অভিযোগগুলো যাচাই করে দেখা। ডাকসু নির্বাচনকে নির্বাচন বলা হলেও সেটি নির্বাচন হয়নি। ডাকসু নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ করে তিনি তাঁকে ডাকসুর সাবেক ভিপি না ডাকতে অনুরোধ করেন।
বাসদের দিনব্যাপী মিলনমেলায় সংগঠনের নেতা-কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে থেকে বিভিন্ন জেলা থেকেও বাসদের সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। অনুষ্ঠানে অতিথি ও দলের নেতাদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে দেশাত্মবোধক বিভিন্ন গান পরিবেশন করেন দলের সদস্যরা। আর শিশু-কিশোরদের হই হুল্লোড়ে আয়োজনটি সত্যিই মিলনমেলায় পরিণত হয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা সাইফুল হক, জাতীয় গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ্বাস, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, আইনজীবী আকতার কবির চৌধুরী প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।