বাম গণতান্ত্রিক জোটের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের বাধা, মারধরের অভিযোগ

বাম গণতান্ত্রিক জোটের হরতালের প্রচারণা চালাতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জোটের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে
ছবি: সংগৃহীত

বাম গণতান্ত্রিক জোটের হরতালের প্রচারণা চালাতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা জোটের নেতা–কর্মীদের মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের দাবি, ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরে তাঁদের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।

আজ সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালাতে চাইলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা জানিয়েছেন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, কেন্দ্রীয় ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমানসহ ক্যাম্পাস ছাত্র ইউনিয়নের দুই সদস্য ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধরে আহত হয়েছেন। আহতদের ক্যাম্পাসের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি কে এম মুত্তাকী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিরোধ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর দাবিতে ২৮ মার্চ দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। হরতালের প্রচারণায় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালানো হচ্ছিল। হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা এসে বাধা দিয়ে মারধর শুরু করেন। তাঁরা প্রচারণাপত্রও নিয়ে চলে যান।

কে এম মুত্তাকীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, বহিরাগত কিছু মানুষ ক্যাম্পাসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন লিফলেট বিতরণ করার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, ক্যাম্পাসে বাম জোটের কর্মসূচিতে বাধা দেয় ছাত্রলীগ। এ সময় দুই পক্ষে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে কোনো পক্ষই রাজি হয়নি।

এ বিষয়ে ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, ‘কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে আসি। পরে বহিরাগতদের প্রক্টরের দপ্তরের লোকজন নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের সমঝোতার কিছু নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সবার সমান অধিকার রয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক দল এখানে তাদের কর্মসূচি চালাতে পারে—এমনটা দাবি করে কে এম মুত্তাকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক দলের নিজেদের কর্মসূচি পালনের সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ যে কারণে হামলা করেছে, এখানে ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের প্রশ্ন আসে না। ক্ষমতায় আছে, তাই হামলা করেছে।

মারামারির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে দুজন সহকারী প্রক্টরকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। বাম জোটের নেতা–কর্মীরা আগে থেকে জানিয়ে এলে বা এসেও আমাদের জানালে ভালো হতো। যেহেতু তাঁরা বড় নেতা, আমরা তাঁদের সহযোগিতা করতে পারতাম।’

বাম গণতান্ত্রিক জোট ১১ মার্চ রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনের প্রগতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে তারা ২৮ মার্চ দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হরতালের এ ঘোষণা দেন জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচারকে তারা তাদের নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। উন্নয়নের কথা বলে তারা তাদের দুর্নীতি ও লুটপাটকে আড়ালের চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে রক্ষায় ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবেই বাম জোটের হরতাল (সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা) ঘোষণা করেছে।