চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বহিষ্কারের হুমকি সত্ত্বেও ১২টি ইউপিতেই লড়ছেন ক্ষমতাসীন দল ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বিদ্রোহীরা। আগামী ১৫ জুনের এই ভোট ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অনুসারীরা সংঘাতেও জড়িয়েছেন। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
১৫ জুন বাঁশখালীর ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৩টি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন একজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। শেষ পর্যন্ত ১৪ ইউপির মধ্যে ১২টিতেই বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, দল থেকে বিদ্রোহীদের অনুরোধ করা হয়েছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য। দলের কথা না মানলে নিয়ম অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাঁশখালীর ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে বর্তমানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান রয়েছেন। বাকি চারটিতে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত চেয়ারম্যান আছেন। এবারের নির্বাচনে প্রতিটি ইউনিয়নেই বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আগে থেকেই উত্তেজনা চলছিল। ইতিমধ্যে দুই প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। আজ শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। বিদ্রোহের কারণে প্রচারণার সময় আরও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে গত বুধবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। এ সময় বিদ্রোহীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় দল থেকে বহিষ্কারের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু এই হুমকি একজন ছাড়া অন্য বিদ্রোহীরা কানে তোলেননি। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে কেবল সরল ইউনিয়নে ইমরানুল হক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। অবশ্য সেখানে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানেই আছেন দলীয় প্রার্থী রশিদ আহমদ। এ ছাড়া শেখেরখিল ইউনিয়নে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন না। এখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন তালুকদার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
বাকি ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে কালীপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান শাহাদাত আলম। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য মো. নোমান। ভোটের প্রচার শুরুর আগেই দুজন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। গত বুধবার রাতে দুজনের অনুসারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
বাহারছড়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি তাজুল ইসলাম। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী।
গন্ডামারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিহাবুল হক সিকদার। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে আছেন যুবলীগের সাবেক সদস্য সেলিম উল্লাহ। শিহাবুল হক সিকদার বলেন, ‘সেলিম উল্লাহ একসময় যুবলীগ করতেন। এখন করেন না। তিনি থাকলেও আমার কোনো সমস্যা হবে না। দলীয় ভোট তিনি পাবেন না।’
কাথরিয়া ইউনিয়নে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইবনে আমিন। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন চৌধুরী।
শীলকূপ ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কায়েশ সরোয়ার সুমন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান।
পুকুরিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বোরহান উদ্দিন নেওয়াজ। এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আকতার হোসেন।
সাধনপুর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক আহছান উল্লাহ চৌধুরী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কে এম সালাউদ্দিন কামাল।
খানখানাবাদ ইউনিয়নে জসীম উদ্দিন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। এখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান বদরুদ্দিন চৌধুরী মনোনয়ন পাননি। তিনি নির্বাচন না করলেও বিদ্রোহী হিসেবে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হক চৌধুরী লড়ছেন।
চাম্বল ইউনিয়নে আবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের।
ছনুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। গতবারের মতো এবারও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
পুঁইছড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জাকের হোসেন চৌধুরী। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তারেকুর রহমান ও নুর মো. ফরহাদুল আলম। তাঁরা দুজনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত।
বৈলছড়ি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। বিদ্রোহী হিসেবে উপজেলা তাঁতী লীগ সভাপতি মো. মনছুর আলম প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যান অজনপ্রিয়। ত্রাণ চুরিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এলাকার লোকজন আমার পক্ষে রয়েছেন, তাই প্রার্থী হয়েছি। সরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে কফিল উদ্দিন বলেন, জনগণ ও কর্মীরা দল যাঁকে সমর্থন দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে থাকবেন। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সত্য নয়। যাঁরা বিদ্রোহী হয়েছেন, দল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে দলীয় অবস্থানের বিষয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, যাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বহিষ্কারের জন্য তাঁদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে।