বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কীভাবে ক্ষমতায় টিকে আছে? শুধু বন্দুকের নলের জোরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে সম্পূর্ণ করায়ত্ত করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে।
আজ শনিবার দুপুরে পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে কল্যাণ পার্টির চতুর্থ জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ চক্রান্তকারীদের সঙ্গে আপস করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তিনি বলেছেন, এই সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে দীর্ঘকাল ধরে যারা চক্রান্ত করছে, তাদের সঙ্গে আপস করে ক্ষমতায় টিকে আছে। আজকে আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে সম্পূর্ণ দূরে। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, জোর করে ক্ষমতায় বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। সাময়িক সময়ের জন্য থাকা যায়, বিশ্বের ইতিহাস তাই বলে। তিনি বলেন, বিএনপি কখনো চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী প্রায়ই বলে, বিএনপি চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসে। বিএনপি কোনো দিন চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপি প্রতিবার জনগণের সুষ্ঠু ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। কখনোই পেছনের দরজা বা অসুস্থভাবে ক্ষমতায় আসেনি।
বিএনপির কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়নি—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতকালের এই মন্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবৈধ’ সরকারের প্রধান একটি ‘মিথ্যা’ কথা যদি বারবার বলেন, তা জনগণ বিশ্বাস করে। এ দেশের মানুষ সবাই জানে, বিএনপি নেতাদের ও খালেদা জিয়াকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো মিথ্যা মামলা, নাকি সত্য মামলা।
বাংলাদেশের রাজনীতিকে কবর দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ দেশের রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণের অনেক আগেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। ১/১১-এর সময় যে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তা অসাংবিধানিক সরকার। আমরা এটাও জানি, আজকে যারা ‘অবৈধ’ ক্ষমতায় আছে, তারা দীর্ঘকাল আন্দোলন করে তাদের এনেছিল। তখনো আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গর্ব করে বলেছিলেন, ১/১১-এর সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। এসব কথা আমরা ভুলে যাইনি।’
খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখন চলতে পারেন না, কিছু খেতে পারেন না। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি তাঁকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। কিন্তু সরকার তাঁকে পিজি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমরা মনে করি না, সেখানে তাঁর সঠিক চিকিৎসা হবে।’
সম্মেলনের প্রধান আলোচক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, সেই গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের বাহন নির্বাচন। আমরা সবাই জানি, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন “২৯ তারিখ রাতে” হয়ে গেছে। এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি। ভোট দিয়েছে সরকারি কর্মচারী, আওয়ামী লীগের কর্মীরা এবং তাদের পাহারা দিয়েছে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব।’
কল্যাণ পার্টির চতুর্থ সম্মেলনে আবারও দলটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মহাসচিব হিসেবে মনোনীত হয়েছেন এম এম আমিনুর রহমান এবং যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন নুরুন্নবী ভূঁইয়া। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এসব নাম ঘোষণা করে বলেন, ‘আমাকে চতুর্থবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত করায় দলের সব পর্যায়ের কাউন্সিলরদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ আগামী ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
বিএনপির স্থায়ী যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কল্যাণ পার্টির যুগ্ম মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানসহ কল্যাণ পার্টির সদ্য বিদায়ী কমিটির বিভিন্ন পদের নেতারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।