বিএনপির সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত বগুড়ার শেরপুর-ধুনট আসনের সাবেক সাংসদ গোলাম মো. সিরাজ। ১১ বছর ধরে তিনি কার্যত দলীয় কার্যক্রমের বাইরে রয়েছেন। হঠাৎ আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দলবলে উপস্থিত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর সামনে বক্তৃতাও করেছেন। সংকট শুরু এখানেই। এ সময় তাঁর বিরোধিতা করে দলীয় লোকজন স্লোগান দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অনুষ্ঠানে আসা অনেকে অস্বস্তিও প্রকাশ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শহরের নওয়াব বাড়ি সড়কের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দলীয় নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তি দাবি করেন। পরে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বক্তব্য দেওয়ার জন্য গোলাম মো. সিরাজের নাম ঘোষণা করেন। এর পরপরই অনুষ্ঠানস্থলের অস্থায়ী মঞ্চের সামনে নেতা-কর্মীরা তাঁর বিরোধিতা করে স্লোগান শুরু করেন। এ সময় সিরাজ বিরোধিতাকারীদের থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। পরে বগুড়া জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম মাইকে ঘোষণা করে সবাইকে শান্ত করেন। এরপর আবার বক্তব্য শুরু করেন সিরাজ। এ সময় আবার তাঁর বিরোধিতা করে স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা। এই বিরোধিতাকারীদের পেছনে আরকে দল সিরাজের পক্ষে স্লোগান দেয়। এর মধ্যেই সিরাজ তাঁর বক্তব্য চালিয়ে যান। সব ভেদাভেদ ভুলে দলের লোকজনকে নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার আহ্বান জানান। আগামী নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান।
সিরাজের বক্তব্যের সময় তাঁর বিরোধিতা করার কারণ জানতে চাইলে আশরাফুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ সংস্কারপন্থী হয়ে বিগত ২০০৬ সাল থেকেই এলাকাছাড়া। রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে তাঁর অংশগ্রহণ নেই। একসময় দলীয় নেত্রীর নামে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি তো বিএনপির ভালো চান না। তাঁকে এভাবে প্রকাশ্যে দলীয় সমাবেশে বক্তৃতা দিতে দেওয়া ঠিক নয়।
এ সময় তাঁর পাশে ধুনট উপজেলা যুবদলের কর্মী পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, সুসময়ের বন্ধুর দরকার নেই। এখন বিএনপির জনপ্রিয়তা দেখে সিরাজ খালেদা জিয়ার অধীনে নির্বাচন করতে এসেছেন। সময় বদলাবে আবার তিনি বদলে যাবেন। বিষয়টি দলের জন্য খুব বিব্রতকর। বিএনপি শুধু দল নয়, এটি বগুড়ার মানুষের প্রাণের স্পন্দন।
শেরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জানে আলম খোকা। তিনি ধুনট-শেরপুর আসনে ২০০৮ সালে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পান। এ নির্বাচনে খোকা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘সিরাজ দলের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী কথা বলেছেন। মসজিদ ঠিক রেখে সিরাজ ইমাম পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। আমি ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে রাজপথে আছি। সিরাজ দল করবেন, এই হিসেবে তাঁকে মাফ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু সাধারণ নেতা-কর্মীরা তো এটা আর জানে না। তাঁরা সিরাজকে মানতে পারছেন না। এটা অবশ্যই বিব্রতকর। বিষয়টি সাধারণ নেতা-কর্মীদেরও জানানো দরকার।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁর বক্তব্যের সময় বিরোধিতাকারীদের তো পরে আমি থামিয়ে দিলাম। অনেক দিন পর দলীয় কার্যক্রমে এলে এমন ছোটখাটো সমস্যা হয়। এটা বড় কিছু নয়। এমন ঘটনায় তো হালকা বিব্রত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সময় গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চান বলেন, সিরাজকে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। এটা অন্যভাবে দেখার কোনো কিছু নেই।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘এটা খুব বেশি বিব্রত হওয়ার বিষয় নয়। রাজনীতিতে এটা স্বাভাবিক। এটা আমাদের এক সিদ্ধান্ত নয়। দলীয় সিদ্ধান্ত। নেতিবাচক তো কিছু নেই।’