তিন বছর আগে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে ফোনালাপের মাধ্যমে উসকানির অভিযোগের এক মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দুজনের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। একই অভিযোগে তাঁর নামে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালতে মামলা দুটির প্রতিবেদন জমা দেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় গুহ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান প্রথম আলোকে জানান, আমীর খসরুসহ দুজন আসামির নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আরেকজন হলেন, মিলহানুর রহমান। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় দুজনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রগুলো গ্রহণের শুনানির জন্য তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
২০১৮ সালের ৪ আগস্ট তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বাদী হয়ে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা দুটি করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন (সংশোধিত ২০১৩ / ৫৭(২) ধারা) এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারায় এ মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন। ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।
মামলা করার সপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ক্লিপে কুমিল্লা থেকে মিলহানুর রহমান নামের এক কর্মীর সঙ্গে একজনকে কথা বলতে শোনা যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে লোকজনকে নামানোর জন্য কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব নিহত হন। এ ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তিন বছর তদন্ত শেষে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র অচল, সরকারবিরোধী কার্যকলাপ, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এ জন্য আমীর খসরু ও মিলহানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলো।
তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে একই অভিযোগে করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তথ্যগত ভুল উল্লেখ করে তাঁদের অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন এসআই সঞ্জয় গুহ। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, সাইবার ফরেনসিক প্রতিবেদন, সাক্ষ্য প্রমাণ ও তদন্তকালে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
একই অভিযোগের এক মামলায় অভিযোগপত্র আরেক মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার ফারুক উল হক আজ দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, তদন্তে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সত্যতা পাওয়ায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় সাইবার ফরেনসিকে সত্যতা পাওয়া যায়নি।