বগুড়া-৬ (পৌরসভা-সদর উপজেলা) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টি জামান নিকেতা। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আজ রোববার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড দলীয় প্রার্থী হিসেবে টি জামান নিকেতার নাম চূড়ান্ত করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ধানের শীষের দুর্গ খ্যাত এই আসনে গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজয়ী হন। নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেওয়ায় শূন্য ঘোষিত এই আসনে আগামী ২৪ জুন উপ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দলীয় মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগের নেতারা কেন্দ্রে যোগাযোগ শুরু করেন। গতকাল শনিবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে আটজন আবেদন জমা দেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছোট ছেলে ও বগুড়া জেলা শিল্প বণিক সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান ও টি জামান নিকেতা, চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি মোস্তফা আলম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, জার্মান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আসাদুর রহমান এবং শেরপুর উপজেলার শহর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তাহমিনা জামান হিমিকা।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। টি জামানের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দলের বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান । তিনি নিজেও মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। রাগেবুল আহসান বলেন, টি জামান উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। দলের মনোনয়ন পাওয়াটা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। দল যাঁকে যোগ্য মনে করেছে তিনিই মনোনয়ন পেয়েছেন।
এই উপনির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত নিলেও কে ধানের শীষের প্রার্থী তা এখনো চূড়ান্ত করেনি দলটি। রোববার পর্যন্ত নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না আর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে নিয়েই দলের ভিতরে বাইরে গুঞ্জন চলছিল।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। মহাজোটের প্রার্থীর চেয়ে দেড় লাখের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম পান ২ লাখ ৫ হাজার ৯৮৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমর পান ৩৯ হাজার ৯৬১ ভোট। ওমর ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন।
১৯৭৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব কটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে জিতেছে বিএনপি। এর মধ্যে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা চারবার বিপুল ভোটে সাংসদ হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিএনপির অন্য প্রার্থীরা জয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট ভোটের ৭১ শতাংশ পেয়ে জয়ী হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে পেয়েছিলেন মোট ভোটের ৭৮ শতাংশ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম শপথ না নেওয়ায় গত ৩০ এপ্রিল এ আসনটি শূন্য ঘোষণার কথা সংসদে অবহিত করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। এবারও সমঝোতার ভিত্তিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁকে এ আসন ছেড়ে দেয় মহাজোট। তবে নির্বাচনে হেরে যান তিনি।